কোয়েল পাখির পালনে খাবারের পরিমাণ ও সঠিক নিয়মে খাবার প্রয়োগ

212

কোয়েল পাখি আমাদের দেশে একটি সুপরিচিত পাখি । বাড়িতে কোয়েল পাখি চাষ করার সুবিধা অনেক কারণ এটি গৃহপালিত পাখির মধ্যে সবচাইতে ক্ষুদ্র জাত । তবে এটি আমাদের দেশের পাখি নয় । এর আদি নিবাস জাপান । এই পাখি বাড়িতে চাষ করা খুবই সহজ । কোয়েল পালন করার জন্য অতিরিক্ত বা বাহুল্য কোন খরচ হয় না । কোয়েলের ডিম দেখতে অনেক সুন্দর । এর গায়ে ছোট ছোট রঙের ছিটা দেওয়া থাকে । কোয়েলকে সহজেই পোষ মানানো যায় । বাড়িতে স্বল্প জায়গাতেও কোয়েল পালন করা যায় । অর্থনৈতিক ভাবেও কোয়েল পালন অত্যন্ত লাভজনক । আপনি আপনার বাড়িতে এই কোয়েল পাখির চাষ করতে পারেন । আসুন জেনে নেই কিভাবে এই পাখির চাষ করা সম্ভব ।

 

কোয়েল পাখি চাষে কিভাবে খাঁচা বা ঘর তৈরি করবেন

 

বাড়িতে কোয়েল পাখি চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমে উপযুক্ত খাঁচা তৈরি করতে হবে । এক্ষেত্রে বেশ কিছু পদ্ধতি আছে । তাঁর মধ্যে ব্যাটারি বা খাঁচা পদ্ধতি সবচাইতে সহজ এবং লাভজনক । এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের খাঁচা আছে যেমন লেয়ার খাঁচা, ব্রিডার খাঁচা, ব্রডার খাঁচা, বিয়ারিং খাঁচা ইত্যাদি । তবে অল্প জায়গায় যদি বেশি সংখ্যেক কোয়েল পাখি পালন করতে চান তাহলে ব্যাটারী পদ্ধতি ব্যবহার করার সর্বোত্তম ।

 

কোয়েল পাখির জাত বাছাই করা

 

আমাদের দেশে চাষ করার মত কোয়েলের দুটি জাত আছে । সেগুলি হল ১। লেয়ার কোয়েল ২। ব্রয়লার কোয়েল । এগুলোকে আপনি আপনার বাড়িতে চাষ করতে পারেন ।

কোয়েল পাখি পালন করার সঠিক সময়

বাড়িতে কোয়েল পাখি চাষ করার জন্য তেমন কোন নির্দিষ্ট সময় ধরাবাধা নেই । আপনি ইচ্ছা করলে বছরের যেকোন সময়ে কোয়েল পাখির চাষ করতে পারেন ।

 

কিভাবে কোয়েল পাখি পালন করবেন ও সঠিক নিয়মে যত্ন নিবেন

 

কোয়েল পাখি পালন করার জন্য বেশী পরিশ্রম করতে হয় না । তবে খেয়াল রাখতে হবে কোয়েল পাখির বাসায় যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকে । এছাড়াও কোয়েল পাখির বাসা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । মনে রাখবেন ময়লাযুক্ত ডিম সাধারণত রোগ ও জীবাণুর প্রধান উৎস । তাই কয়েল পাখির বাচ্চা ফুটানোর জন্য সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ডিম বসাতে হবে । তবে খেয়াল রাখবেন বাচ্চা ফুটানোর ডিম কখনও ধোয়া উচিত নয় ।

 

সঠিক নিয়মে কোয়েল পাখির পালনের পদ্ধতি/কৌশল

 

বাড়িতে কোয়েল পাখির পালনের জন্য সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় । কোয়েল পাখি সাধারণত প্রথমে পোলট্রিতে বড় হয় । এরা ডিম ফোটানোর সময় দেখা যায় যে ডিমে তা দেয় না । কোয়েল পাখির বাচ্চা সাধারণত ইনকিউবেটরে ফোটানো হয় । এই কাজ সম্পাদন করতে প্রায় ১৬–১৮ দিন সময় লাগে । বাড়িতে কোয়েল পাখি চাষ করার ক্ষেত্রে যদি শুধুমাত্র ডিম ফুটাতে চান তাহলে স্ত্রী কোয়েল প্রতিপালন অধিক লাভজনক । তবে সবসময় লক্ষ্য রাখবেন কোয়েল পাখি পালনে ব্রুডারের তাপমাত্রা যেন সবসময় সঠিক নিয়মে থাকে । তা না হলে কোয়েল পাখির অনেক ক্ষতি হতে পারে ।

 

কোয়েল পাখির পালনে খাবারের পরিমাণ ও সঠিক নিয়মে খাবার প্রয়োগ

 

কোয়েল পাখির খাবার সাধারণত সহজলভ্য । কোয়েল পাখি পালনে আলাদা কোন সুষম খাবারের প্রয়োজন পড়ে না । বর্তমানে বাজারের ব্রয়লার মুরগির খাদ্য এবং পশুখাদ্য হিসেবে মিক্সার খাদ্যই তাদের সাধারণ খাবার । শুধুমাত্র ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবার পর কিছুটা বিশেষ যত্ন প্রয়োজন হয় । এইসময় কোয়েলের বাচ্চাকে সুষম খাদ্য প্রদান করতে হয় । তবে খেয়াল রাখবেন কোয়েলের খাঁচায় যেন যথেষ্ট পানি ব্যবস্থা থাকে । এবং কোয়েল কে দিনে তিনবার খাবার দেওয়ার চেষ্টা করবেন ।

 

কোয়েল পাখি পালনে রোগ বালাই ও তাঁর প্রতিকার

 

কোয়েল পাখি পালন করার ক্ষেত্রে কোয়েল পাখির বেশকিছু রোগ বালাই দেখা যায় । কোয়েলের বিভিন্ন রোগ ব্যাধির মধ্যে আমাশয় উল্লেখ্যযোগ্য । এছাড়াও ব্রুডার নিউমোনিয়া আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বাচ্চা কোয়েলের মৃত্যু হতে পারে, যদি না ব্রুডারে থাকাকালীন তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায় ৷ তবে যদি কোন কোয়েল পাখি অসুস্থ্য হয় তাহলে উক্ত পাখিটীকে যথাশীঘ্রই কোয়েলের খাঁচা থেকে সরিয়ে নিতে হবে । অসুস্থ্য কোয়েলের সংস্পর্শে থাকলে বাকি সুস্থ কোয়েলও আক্রান্ত হতে পারে ।

কিভাবে কোয়েল পাখি ও খাচার যত্ন ও পরিচর্যা করবেন

কোয়েল পাখি পালনে আপনাকে বেশ সচেতন হতে হবে । কোয়েলের জন্য খাবার এবং পানির সুব্যবস্থা তার খাঁচাতেই রাখতে হবে । যে খাঁচাতে কোয়েল পাখি পালন করা হবে সেই খাঁচার জালের ফাকগুলো একটু ঘন হতে হবে । যাতে করে কোয়েলের মুখ বা গলা সেই ফাক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে না আসে । এছাড়াও কোয়েলের খাঁচায় যেন ইঁদুর, ছুঁচো, ইত্যাদি না ঢুকতে পারে-সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । সর্বোপরি খেয়াল রাখবেন কোয়েলের খাঁচায় পানি খাবার বা রাখার পাত্র উল্টে যেন কোয়েলের গা ভিজে না যায় । এবং কোয়েলের খাঁচা সর্বদা জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে । প্রয়োজনে বাজারে যে সমস্ত উন্নতমানের জীবাণুনাশক পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে ।

 

কোয়েল পাখির মাংস ও ডিমের খাদ্য গুণাগুণ

 

কোয়েল পাখির মধ্যে অনেক ধরনের খাদ্য গুণাগুণ বিদ্যমান । কোয়েলের মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু । এদের মাংস ও ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ, প্রোটিন ও স্নেজাতীয় পদার্থ বিদ্যমান । মনে রাখবেন একটি বড় আকারের মুরগির ডিমে যে পরিমাণ প্রেটিন রয়েছে একটি ক্ষুদ্র কোয়েলের ডিমে ও প্রায় সেই পরিমাণ প্রোটিন বিদ্যমান ।

 

কোয়েল পাখি পালনের সুবিধা

 

কোয়েল পাখির পালন করলে অনেক ধরণের সুবিধা আছে । বাড়িতে কোয়েল পাখির পালন করলে একটি ভাল জাতের কোয়েল থেকে বছরে অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম পাওয়া যায় । কোয়েল চাষের ঝুঁকিও কম । মুরগির মতো কোন টিকা দিতে হয় না । কোয়েল চাষে বেশী খরচ করতে হয় না । অল্প পরিসরে জায়গা নিয়ে অনেকগুলো কোয়েল পাখি পালন করা যায় । খুবই অল্প সময়ের মধ্যে একটি বাচ্চা কোয়েল ডিম দিয়ে থাকে । কোয়েলের ডিম থেকে সর্বোচ্চ ২০ দিনের মধ্যেই বাচ্চা ফুটে বের হয় । ডিম থেকে পাখি হতে মোটামুটি ১৮ দিন । পূর্ণ মাপের পাখি হতে লাগে ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ । তার পরেই ডিম দেবে পাখি ।