পতিত জমিতে তুলা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন নীলফামারীর গোলাম মোস্তফা

42

দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে কোনো ফুলের বাগান। কিন্তু কাছে গিয়ে একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে সেটি ফুলের বাগান নয়, কলি থেকে বের হয়ে আছে তুলা। সে তুলা সংগ্রহ করে শুকানো হচ্ছে চাতালে। এরপর তা বস্তায় করে সরাসরি চলে যাবে কারখানায়, তৈরি হবে সার্জিক্যাল গজ-ব্যান্ডেজ।

দ্বিতীয় বারের মতো হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন নীলফামারীর কৃষক এবিএম গোলাম মোস্তফা। নীলফামারী পৌরসভার টুপির মোড় এলাকায় এই তুলা নজর কেড়েছে সবার। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় আগামী মৌসুমে এই তুলা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন স্থানীয় চাষিরা।

ওই এলাকার কৃষক জাকির হোসেন বলেন, বরাবর এই জমিগুলো পড়ে থাকে। এবার দেখছি তুলা চাষ হচ্ছে। আমার নিজের যে জমি আছে সেখানে আগামীতে আমিও তুলা চাষ করতে চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা সুরভি আক্তার বলেন, জমিটা আগে পতিত ছিল। এলাকার সবাই এখানে খেলাধুলা করত। তবে যাদের জমি তারা এবার উদ্যোগ নিয়ে তুলা চাষ করে। এই তুলা চাষ আমরা আগে দেখিনি।

তুলা শুকানোর কাজ করা শ্রমিক আতিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিটি গাছে ফল থাকে ৬৫ থেকে ৭০ টা। যখন ফলগুলো পাকছে তখন আমরা সেটা তুলে নিচ্ছি। এরপর তুলাগুলো চাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। চাতালে শুকানোর পর বস্তায় করে পাঠানো হবে তারাগঞ্জের কোম্পানিতে।

গত বছর রংপুরের তারাগঞ্জের একটি কোম্পানির সহযোগিতায় দেড় বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেন গোলাম মোস্তফা। প্রথমবার তুলা চাষে সাফল্যের পর এবার তিন বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন তিনি। প্রথমবারের তুলনায় এবার বেশি ফলনের আশা করছেন।

তুলা চাষি এবিএম গোলাম মোস্তফা বলেন, গত বছর আমি দেড় বিঘা জমিতে চাষ করে তুলা পেয়েছিলাম ১৮ মণ। যার বাজার মূল্য ৮ হাজার টাকা করে হলে ৭২ হাজার টাকা হয় আর খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। এবার আমি তিন বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি। এটাতে একটু সার লাগে, সেচ ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। এ কীটনাশক ৫ থেকে ৬ বার স্প্রে করতে হয়। এবার গতবছরের তুলনায় আমার ফলন বেশি হবে। এরপর আমি চার থেকে পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করতে পারি। এই তুলা দিয়ে হাসপাতালের সার্জিক্যাল গজ-ব্যান্ডেজ ও কাপড় তৈরি করার সুতা হবে। এই জমিটা আমার পতিত ছিল। আর তুলাকে সাদা সোনাও বলা হয়। আমি পতিত জমিতে সাদা সোনা চাষ করেছি।

এদিকে তুলার আবাদ বৃদ্ধি করতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি বিভাগ। নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, তুলা একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। নীলফামারী সদর উপজেলায় দ্বিতীয়বারের মতো একজন কৃষক তুলা চাষ করেছেন। আমাদের নীলফামারীর মাটি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। কেউ তুলা চাষ করতে চাইলে আমরা সব ধরনের সহায়তা দেব। পৌরসভা এলাকায় যে তুলা চাষ হয়েছে এটি দেখে অনেক কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা আশাবাদী অন্যান্য ফসলের মতো তুলা চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।