পশুর পরজীবী রোগ
বাহ্যিক পরজীবী : গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়াসহ বিভিন্ন গবাদিপশুর দেহের ত্বকে আঠালি, উকুন, মাছি, মাইটস, কেডস পরজীবী হিসেবে বাস করে। এগুলোর বর্ণনা নিচে দেয়া হলো :
ক. আঠালি : ১. প্রায় সকল গবাদি পশু আঠালি দ্বারা আক্রান্ত হয়।
২. আঠালি পশুর ত্বকে বাস করে, রক্ত চুষে খায়।
৩. বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণে সহায়তা করে।
৪. অধিক আক্রমণে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
খ. উকুন : গৃহপালিত পশুতে ১. কামড়ানো উকুন ও
২. রক্ত চোষা উকুন আক্রমণ করে।
১. কামড়ানো উকুন : উকুন কামড়ালে পশুর দেহ খুব চুলকায়। ফলে পশু শক্ত জিনিসের সাথে শরীর ঘষে ক্ষতের সৃষ্টি করে। কামড়ানো উকুন সাধারণত কুঁজের উপর ও লেজের গোড়ার চারদিকে বাস করে।
২. রক্ত চোষা উকুন : রক্তচোষা উকুন কামড়িয়ে দেহ থেকে রক্ত চুষে খায়। রক্ত চোষা উকুন পশুর ঘাড়ের দুই পাশে, বক্ষস্থলে, উরুর ভেতরে, লেজের গোড়ায়, মাথায়, নাক, চোখ ও কানের চারপাশে জমাট বেঁধে আটকিয়ে থাকে। উকুন কামড়ানোর জন্য পশুর দেহ বাড়ে না, দুধ কমে যায় এবং কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে।
গ. মাছি : ১. গৃহপালিত পশুকে বিভিন্ন ধরনের মাছি আক্রমণ করে যেমনÑ মহিষের মাছি, আস্তাবলের মাছি, ঘোড়ার মাছি, উড়ন্ত মাছি ইত্যাদি।
২. কিছু মাছি পশুর দেহে কামড় দিয়ে রক্ত চুষে খায়।
৩. কিছু মাছি পশুর দেহের ক্ষতে ডিম পাড়ে।
৪. ডিম থেকে লার্ভা হয়, ফলে ক্ষতে পচন ধরে, ক্ষত শুকায় না।
৫. ক্ষতে বিভিন্ন রোগজীবাণু সংক্রমিত হয়ে রোগ সৃষ্টি হয়।
৬. কিছু মাছি দেহে চুলকানির সৃষ্টি করে।
৭. চুলকানোর জন্য দেহ শক্ত কিছুতে ঘষে বা জিহবা দিয়ে চেটে ঘায়ের সৃষ্টি করে।
৮. পশুর খাওয়া এবং দুধ দোহনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
ঘ. মাইটস : ১. মাইটস পশুর দেহে সংক্রামক চর্মরোগের সৃষ্টি করে।
২. আক্রান্ত পশু বিরক্ত হয়।
৩. পশুর ত্বকের ক্ষতি করে।
৪. পশুর স্বাস্থ্য খারাপ হয়, কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনক্ষমতা কমে যায়।
৫. পশুর দেহ চুলকানোর জন্য শক্ত জিনিসের সাথে গা ঘষে।
ঙ. কেডস : ১. ছাগল ও ভেড়ায় এ জাতীয় পরজীবী আক্রমণ করে।
২. এরা আঠালির মত পশুর রক্ত চুষে খায় এবং দেহ খুব চুলকায়।
৩. চুলকানোর জন্য শক্ত বস্তুর সাথে দেহ ঘষে ক্ষতের সৃষ্টি করে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার/ চিকিৎসা (সব পরজীবীর জন্য) :
১. নিয়মিত দেহ ঘষে গোসল করাতে হবে।
২. প্রতিদিন দেহ চিরুনি দিয়ে ব্রাশ করে দিতে হবে।
৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন লালন পালন করতে হবে।
৪. নেগভুন/এসানটল/নিওসিডোল দেহে প্রয়োগ করতে হবে।
৫. ঘরের মেঝে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
অন্তঃপরজীবী : অন্তপরজীবী হলোÑ গোলকৃমি, ফিতাকৃমি, পাতাকৃমি, সুতাকৃমি, ইত্যাদি।
গোলকৃমির লক্ষণ : ১. পশুর ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
২. দেহের ওজন কমতে থাকে।
৩. মাঝে মাঝে পাতলা পায়খানা হয়।
৪. দেহের লোম এলোমেলো হয়।
৫. রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়।
৬. পশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে।
৭. পশু মারা যায়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার/চিকিৎসা : ১. বাছুরের বয়স তিন মাস হলেই নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত লালন পালন করতে হবে।
৩. গোয়াল ঘর শুকনা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
৪. কাদা পানিযুক্ত বা স্যাঁত স্যাঁতে মাঠের ঘাস পশুকে খাওয়ানো যাবে না।
৫. ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
ফিতাকৃমির লক্ষণ : ১. খাদ্য হজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
২. পশুর মাঝে মধ্যে পেটফুলা ও উদরাময় হয়।
৩. স্বাস্থ্যহানি হয়।
৪. গিড হলে পশু মাথা বাঁকা করে ঘুরতে থাকে।
৫. মস্তিষ্কের যে স্থানে গিড হয় সে স্থানের হাড় নরম হয়।
৬. আক্রান্ত হাড়ে স্পর্শ করলে ব্যথায় চিৎকার দেয়।
৭. অধিক কৃমি হলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে পশু মারা যেতে পারে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার/চিকিৎসা : ১. বাছুরের বয়স তিন মাস হলেই নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবাণুমুক্ত লালন পালন করতে হবে।
৩. গোয়াল ঘর শুকনা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
৪. কাদা পানিযুক্ত বা স্যাঁত স্যাঁতে মাঠের ঘাস পশুকে খাওয়ানো যাবে না।
লেখক: কৃষি প্রাবন্ধিক, সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত লেখক।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৪অক্টোবর২০