গত কয়েক বছর ধরে ব্লাস্ট রোগের কারণে গমের আবাদ কমেছিল মেহেরপুরের গাংনীতে। চলতি বছরে ব্লাস্ট-প্রতিরোধী ও জিংক-সমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল গমের নতুন নতুন জাত কৃষকদের হাতে আসায় এবার গমের আবাদ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনকূল আবহাওয়া ও গেল বছর গমের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাষিরা গম আবাদে আগ্রহী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে কৃষি অফিসের তদারকি একেবারই নেই বলে অভিযোগ চাষিদের। আর কৃষি বিভাগ বলছে, চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মেহেরপুর অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের জন্য উপযোগী। গত কয়েক বছর ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়। গেল বছর ব্লাস্ট-প্রতিরোধী ও জিংক-সমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল গমের নতুন নতুন জাত আবাদ করে কৃষকরা শঙ্কামুক্ত হয়েছেন। গমের মূল্য বৃদ্ধি আর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৬৫ একর জমিতে গম চাষ হয়েছে। বারি ৩০, ৩৩ ও বিডব্লিউ-৩ জাতের গম চাষ করছেন চাষিরা। বাজার দর ভালো থাকলে আগামীতে এ অঞ্চলে গমের আবাদ আরও বাড়বে। তবে কৃষি অফিসের কোনো পরামর্শ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন চাষিরা। গম ক্ষেতে রোগ বালাই দেখা দিলে, কীটনাশক বিক্রেতা চাষিদের একমাত্র ভরসা।
গাংনীর পলাশীপাড়া গ্রামের গমচাষি ইমারুল ইসলাম জানান, তিনি চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে বারি-৩০ ও ৩৩ জাতের গম আবাদ করেছেন। এখন বুকে থোড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গম গাছ। গেল বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছিলেন। গম চাষ বেশ লাভজনক। এক বিঘা গম আবাদে খরচ হয় মাত্র ৬ হাজার টাকা। আর পাওয়া যায় ২০ মণ গম। তিনি আশা করছেন, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন হবে এবং গমচাষিরা লাভবান হবেন। তবে মাঠে কোনো কৃষি অফিসের লোকজনের পরামর্শ পান না বলে অভিযোগ করেছেন
তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের চাষি সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার তিনি ৮ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। গেল বছর আবাদ করেছিলেন ৬ বিঘা। ফলন ভালো ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার বেশি করে গম চাষ করেছেন। তিনি আরও জানান, গমক্ষেতে কোনো রোগবালাই দেখা দিলে কীটনাশক বিক্রেতারা যা বলে তাই শুনতে হয়। কোনো কৃষি অফিসের লোকজনকে পাওয়া যায় না। স্থানীয় ইউপি ভবনে কৃষি অফিসের লোকজনের বসার কথা থাকলেও তাদের দেখা মেলে না।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, তাপ, ক্ষরাসহিষ্ণু জমি গম আবাদের জন্য উপযোগী। ব্লাস্ট-প্রতিরোধী ও জিংক-সমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল গমের নতুন নতুন জাত চাষিদের গম চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে। দেশে গমের উৎপাদন বাড়াতে রোগ-প্রতিরোধী ও জিংক-সমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল নতুন নতুন জাতের গম আবাদে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে নাÑএ অভিযোগ সঠিক নয় বলেও দাবি করেন এই কৃষিবিদ।