যশোরে এবারও ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থ খাদ্য বিভাগ

48

 

যশোরে এবারও ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে ব্যর্থ হচ্ছে খাদ্য বিভাগ। সরকারের ধান ও চাল সংগ্রহে অভিযান শুরুর পর খাদ্য বিভাগ এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালেও ধান সংগ্রহে কৃষক একেবারেই সাড়া দেয়নি। যে কারণে সংগ্রহ মৌসুমে ধান সংগ্রহ সফল হয় না বলে জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে। এ বছরও আমন মৌসুমে কৃষক ধান সংগ্রহে সাড়া দেয়নি।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত বোরো মৌসুমে যশোরে ধান সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার সিংহভাগই অর্জনে ব্যর্থ হয় খাদ্য বিভাগ। লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ ধান গুদামে তুলতে পারে খাদ্য বিভাগ। তবে চাল সংগ্রহের ৩৮ হাজার ৬৪৭ দশমিক ৩৪ টন লক্ষ্যমাত্রার পুুুুুুুুরোটাই অর্জিত হয় বলে খাদ্য বিভাগ জানায়। সে সময়ে খাদ্য বিভাগ দাবি করেছিল অ্যাপসের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করার কারণ ছাড়াও খাদ্যগুদামগুলো দূরদূরান্তে হওয়ায় কৃষক সেখান থেকে ধান নিয়ে না যাওয়ায় ধান সংগ্রহে সাড়া মেলেনি বোরো মৌসুমে। আমন মৌসুমে এ বিষয়ে সিরিয়াস থাকবে বলে খাদ্য বিভাগ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমেও যশোরে ধান  সংগ্রহে সাড়া পায়নি জেলা খাদ্য বিভাগ। সংগ্রহ অভিযানকালে কেজিতে দুই টাকা বাড়িয়ে দেয়ার পরও কৃষক আমন মৌসুমে খাদ্যগুদামে ধান দেয়নি।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুণ্ড জানান, চলতি আমন মৌসুমে যশোরে পাঁচ হাজার ২৮৩ মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর বাইরে ১৪ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ পর্যন্ত যশোরের বিভিন্ন গুদামে ৪২৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারিত ধান সংগ্রহের সময়ের মধ্যে আরও ধান গুদামে জমা হবে বলে তিনি দাবি করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমন মৌসুমে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম একটু বেশি হওয়ায় কৃষকরা তাদের কাছাকাছি বাজারে ধান বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়া খাদ্যগুদামগুলো দূরে হওয়ায় কৃষকরা যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ধান দিতে আগ্রহী নন। তবে চালের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শতভাগ চাল সংগ্রহ হবে বলে তিনি দাবি করেন।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ১০২ চালকল মালিকের সঙ্গে সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল সংগ্রহের বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে। সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা ও আতপ চাল ৩৩ টাকা এবং ধান ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতায় ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়। কৃষি বিভাগের নির্ধারিত কার্ডের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে এসব ধান সংগ্রহের কথা রয়েছে। এসব কৃষকরা জনপ্রতি ১২০ কেজি থেকে তিন মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান সরকারি গুদামে দিতে পারবেন। তবে এতকিছু কোনো কাজে আসছে না যশোরে।

প্রতিবছর কেন ধান সংগ্রহে কৃষক সাড়া দিচ্ছে না, এর কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ কৃষকের কাছেই ধান সংগ্রহের বিষয়ে খাদ্য বিভাগের কোনো বার্তা পৌঁছায় না। যে কারণে প্রকৃত চাষিরাই এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জেলার বাঘারপাড়া এলাকার শেখের বাতান গ্রামের কৃষক আবু বকর জানান, প্রতিবছর আমন ও বোরো মৌসুমে ৭ থেকে ৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন তিনি। তবে খাদ্যগুদামে ধান কখন ক্রয় হয়, সে বিষয়ে তিনি কোনো কিছু জানতে পারেন না। ওই এলাকার অন্য কোনো চাষি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করেছেন, এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই বলে তিনি জানান।

পাশেই রায়পুর গ্রামের শামসুর রহমান বলেন, প্রতিবছর শুনি সরকার ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। আসলে কাদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়, সে বিষয়টি আজ পর্যন্ত জানতে পারলাম না। তিনি বলেন, সরকারি ধান সংগ্রহ অভিযানে প্রকৃত চাষিরা সুযোগ পায় না, যে কারণে প্রতিবছর এ কর্মসূচি এ অঞ্চলে ব্যর্থ হচ্ছে।

তবে কয়েকজন কৃষক জানান, সরকার যখন ধান সংগ্রহ করে, তখন বাজার অপেক্ষা নির্ধারিত দাম কম থাকে। তাছাড়া খাদ্যগুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষককে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। এসব কারণে কৃষক খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহী হয় না।