তীব্র খরায় ঝরছে আমের গুটি, ব্যাপক দুশ্চিন্তায় রংপুরের চাষীরা

19

রংপুরে বাণিজ্যিকভাবে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আমের বাজারে। বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরে রংপুরে কেনাবেচা হয়েছে দুই থেকে আড়াই শত কোটি টাকার আম। আর এসব আম উত্তরবঙ্গ ও রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেরও চাহিদা মেটায়। রংপুরের এই বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম স্বীকৃতি পেয়েছে জিআই পণ্য হিসেবে। তবে এবারের তীব্র খরায় এ বছর আম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাষিরা।

সারাদেশের মতো রংপুরেও চলছে দাবদাহ। তীব্র গরমে জনজীবন হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। অসময়ে বৃষ্টি এবং টানা খরায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য ফসলের মতো আম চাষেও।

আম চাষিরা জানান, চলতি বছরে আমের মুকুল আসার সময় অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসে বৃষ্টি হওয়ায় কালচে হয়ে মুকুল নষ্ট হয়েছে। অবশিষ্ট মুকুল থেকে যা আমের গুটি হয়েছে তা চলতি বৈশাখ মাসে টানা খরা, দাবদাহ ও পোকার আক্রমণে ঝরে পড়ছে। কৃষকরা জানায় সেচ ও স্প্রে দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এতে পর্যাপ্ত আম উদপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন রংপুরের আমচাষিরা।

একই গ্রামে দশ একর জমিতে আমের বাগান করেছেন ইয়াকুব আলী। তার বাগানে যেয়েও আমের গুটি কম দেখা যায়। ইয়াকুব আলীর স্ত্রী বলেন, এতদিন আমের ভারে ডাল বেঁকে পড়ার কথা। কিন্তু এখন পাতা ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এ বছর বেশি আম ধরেনি।

আম বাগান পরিচর্যা করছিলেন চাষি নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, এ বছর গাছে খুব বেশি একটা আম নেই। তার ওপর পোকার আক্রমণও বেশি। স্প্রে করিয়েও কাজ হচ্ছে না। স্থানীয় কৃষি পরামর্শককে দেখিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

আমচাষি আবু সাইদ বলেন, আমের প্রচুর মুকুল এসেছিল। শুরুতে বৃষ্টির সঙ্গে শিলা বৃষ্টি হওয়ায় তখন থেকে আমের ক্ষতি হওয়া শুরু হলো। এখন বাগানে আম কম। যা আছে সেটাও যদি ঝরে পড়া ঠেকানো যেত তাহলে কিছুটা লাভ হতো।

মোজাফফর আলী নামে আরেক আম চাষি বলেন, আমচাষের জন্য এই সময়ে বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার আমের আকার বেশ ছোট হবে। একই সঙ্গে আমের উৎপাদনও কমবে।

চাষি তারাদুল ইসলাম বলেন, আমার চারটা আম বাগান রয়েছে। কিন্তু সবগুলোতে নিয়মিত সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে বাগানে সেচের ব্যবস্থা আছে সেখানে সেচ দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোতে তুলনামূলক বেশি আম দেখা যাচ্ছে। আর যে বাগানে সেচের ব্যবস্থা নেই, সে বাগানগুলো থেকে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে।

খয়বর নামে এক আমচাষি বলেন, এবার বাগানে আমের গুটি কম দেখা যাচ্ছে। গত বছর আম পেয়েছিলাম দেড়শ মণ এবার সে জায়গায় আশি থেকে নব্বই মণ হতে পারে।

এদিকে তীব্র খরায় আমের গুটি রক্ষায় প্রতিদিন গাছে পানি স্প্রে করার মাধ্যমে আমগাছ ধুয়ে দেওয়া সহ পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমের মুকুল আসার সময় পরপর কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় মুকুলের সমস্যা হয়েছিল। এখন সারাদেশেই দাবদাহ চলতেছে। এ সময় করণীয় হচ্ছে, বাগানে প্রচুর পরিমাণে সেচ দিতে হবে। আমরা দেখেছি যেসব চাষিরা নিয়মিত সেচ দিচ্ছে তাদের আমের গুটি পড়ে যাচ্ছে না। যারা একদিন সেচ দিচ্ছে আর এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ দিচ্ছে না তাদের এই সমস্যা হচ্ছে।

আমের পোকা রোধে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমের বাগানে পোকা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত স্প্রে করতে হবে। সঠিক ওষুধ ও পানির অনুপাত ঠিক রাখলে পোকা দমন করা সম্ভব। মোট কথা আমচাষিদের এ সময় বাড়তি যত্ন নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, চলতি খরা মোকাবিলা করে আমের গুটি রক্ষা করতে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের  কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে চলতি বছর রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষাবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার মেট্রিক টন।