গাছে দেখা নেই মুকুলের, মেহেরপুরে হতাশ আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা 

92

মৌসুমে আম গাছে মুকুল না আসায় হতাশার ছাপ লক্ষ করা গেছে মেহেরপুরের গাংনীর আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের চোখে মুখে। কারণ প্রতি বছর এ সময়  বাগানে আমের গাছে মুকুলে মুকুলে ভরপুর থাকে। সময়মতো মুকুল না এলে চরম লোকসান গুনতে হবে তাদের। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মুকুল আসতে দেরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি বিভাগ।

আম ব্যবসায়ী ও আমচাষিরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার দেরিতে শীতের আগমন দীর্ঘমেয়াদি শৈত্যপ্রবাহ, অতিরিক্ত শীত ও ঠাণ্ডা হওয়ায় আমের গাছে মুকুল আসছে না। তবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছেন, সঠিক নিয়মে ও উপযুক্ত সেচ ও স্প্রেসহ অন্যান্য প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারলে সামনে কিছু দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই মুকুল আসবে। শীত ও ঠাণ্ডার কোনো প্রভাব পড়বে না।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী এ উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর আম বাগান রয়েছে। ল্যাংড়া, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, গোপালভোগ, হাঁড়িভাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি জাতের আম বাগান রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজন সব সময় চাষিদের বাগান পরিচর্যা ও করণীয় সম্পর্কে নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করছেন। তবে গাছে মুকুল না আসার কারণে অনেক চাষি ও ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে গাংনীর বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে ফেব্রুয়ারি মাসের দুই সপ্তাহ পরেও আম বাগানে আম গাছে কোনো মুকুল নেই। দু-একটি গাছে থাকলে একেবারেই কম। আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীরা বাগানে স্প্রে ও সেচ দেয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। কৃষি অফিস ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শে পরিচর্যা করছেন। তবে সবার মুখেই হতাশার গল্প।

মিনাপাড়া গ্রামের আমচাষি মাবুদ জানান, শিমুলতলা মাঠে তার ৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমবাগান রয়েছে। এ বছর  দীর্ঘমেয়াদি শীত ও ঠাণ্ডা হওয়ায় আম বাগানে এখনও মুকুল আসেনি। তাই খুব চিন্তিত আছেন তিনি। তারপর ওপর আবার এ বছরে বালাইনাশকের দাম কয়েক বছরের মধ্যে এবার অনেক বেশি হওয়ায় খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। তবুও গাছে মুকুল আসার আশায় সেচ ও  বালাই নাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

আম বাগান মালিক মানিকদিয়া গ্রামের মোজাম্মেল হক জানান,  তার ৭ বিঘা জমিতে আমবাগান। একটি গাছেও মুকুল আসেনি। মুকুল আসবে এ আশায় তিনিও স্প্রে করছেন বাগানে। তিনি আরও জানান, বালাইনসাশকের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিককের দামও বাড়ছে। প্রায় এক যুগের মধ্যে এবারই ফাল্গুন মাসের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও আমের মুকুল পুরাপুরি দেখা দেয়নি। যা চাষি ও ব্যবসায়ীদের অনেকটা হতাশ করেছে।

আমব্যবসায়ী হেমায়েতপুরের আনারুল জানান, তিনি বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০ বিঘা জমির আমবাগান কিনেছেন। দুই বছরের জন্য বাগান কিনতে হয়। গেল বছর মুকুল এসেছিল কিন্তু ঝড়ে আম পড়ে যাওয়ায় বেশ লোকসানের মুখে পড়েন তিনি। এ বছর সেই লোকসান পুষিয়ে নেয়ার আশায় বিভিন্ন ধরনের বালাই নাশক স্প্রে করছেন। কিন্তু মুকুল না আসায় তিনিও হতাশ।

গাংনী উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উদ্ভিদ)  জানান, গত বছর যেহেতু ব্যাপক মুকুল এসেছিল সেহেতু এবার মুকুল কম আসতে পারে। তিনি আরও বলেন, শীত ও ঠাণ্ডার কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে উপজেলার প্রায় সব আম বাগানেই কমবেশি মুকুল আসতে শুরু করেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সবগুলো আম গাছে মুকুল বের হবে।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, আম গাছে মুকুল আসেনি বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এ বছর দেরিতে শীতের আগমন ও ঠাণ্ডা বেশি হওয়ায় মুকুল আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে আগামী  ১৫ দিনের মধ্যে প্রায় গাছে মুকুল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখনও সময় আছে সেহেতু কৃষি অফিসারদের সঙ্গে পরামর্শ করে সঠিকভাবে সেচ ও বালাইনাশক স্প্রে করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই মুকুল আসবে।