গোপালগঞ্জে অনাবাদি জমিতে তরমুজের বাম্পার ফলন

116

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নের মানিকহার গ্রামে বিভিন্ন আগাছায় ভরপুর ছিল যেসব অনাবাদি জমি, সেখানে কৃষকরা তরমুজের চাষ করে লাভবান হওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মানিকহার গ্রামে ১৯ হেক্টর অনাবাদি জমিতে এ বছর তরমুজের চাষ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ৩৮ টন তরমুজ ফলেছে। মোট ৭২২ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য দুই কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়েছে পাঁচ কেজি থেকে আট কেজি পর্যন্ত। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এসব তরমুজ বিক্রি শেষ হবে। এতে কৃষকরা প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করবেন বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কাঠি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব মধু জানান, ওই ইউনিয়নের মানিকহার ব্লকের ১২ হেক্টর অনাবাদি জমিতে গত বছর তরমুজের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হন। তাই এ বছর কৃষক আরও সাত হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ বাড়ান। এখানে চলতি বছরে মোট ১৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়। আগে এসব জমি অনাবাদি থাকত। আমরা কৃষকদের এসব জমিতে তরমুজ চাষে উৎসাহ দিই। তারপর তারা গত বছর প্রথম তরমুজ চাষ শুরু করে। এ বছর লাভজনক তরমুজ চাষ সম্প্রসারণ করেছে চাষিরা। এ ব্যাপারে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে তরমুজ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষক প্রতিকেজি তরমুজ ৪০ টাকা কেজি দরে ক্ষেত থেকে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। সে হিসাবে কৃষক দুই কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবে। আগামী ১০ দিন পরে তরমুজ বিক্রি শেষ হলে ওই জমিতে অন্য ফসলের চাষ করাও সম্ভব হবে বলে জানালেন কৃষি কর্মকর্তা।

তরমুজ চাষি নারায়ণ বিশ্বাস, সঞ্জয় ও স্বপন বলেন, মানিকহার গ্রামের এ জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। আমরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত বছর ছয় কৃষক সংগঠিত হয়ে অনাবাদি ১২ হেক্টর জমিতে প্রথম তরমুজের চাষ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। ফলে এ বছর আরও সাত একর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ বাড়াই। মোট ১৯ হেক্টর জমিতে এখন তরমুজের সমারোহ। তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজ বিক্রি করে খরচ বাদে প্রায় দেড় কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

মানিকহার গ্রামের ফিরোজ মিয়া বলেন, এ এলাকার অনাবাদি জমিতে স্বপনসহ ছয় কৃষক তরমুজ চাষ করেন। আগে এখানে কোনো ফসল হতো না। কখনও কল্পনা করতে পারিনি এ জমিতে তরমুজ হবে। এখন ওই ছয় কৃষক এ জমিতে তরমুজ উৎপাদন করে অন্য চাষিদের চোখ খুলে দিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, এ বছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বাড়াতে রবি মৌসুমের শুরুতে আমরা কৃষকদের তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করি। কৃষকরা আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সব ক্ষেত্রেই চাষাবাদ সম্প্রসারণ করেছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি ইউনিয়নের মানিকহার ব্লকের কৃষক আনাবাদি ১৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করে। ১৯ হেক্টর জমিজুড়ে তরমুজের সমারোহ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। গোপালগঞ্জের তরমুজের আড়তদার জয়দেব পাল বলেন, বাজারে তরমুজের শেষ সময় পার হচ্ছে, তাই সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশ চড়া। তরমুজ বিক্রি করে কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হওয়ায় আগামী মৌসুমে কাঠি ইউনিয়নের মানিকহার গ্রামে অনাবাদি জমি ছাড়াও অন্য ফসলি জমিতে অনেকেই তরমুজ চাষের ইচ্ছা পোষণ করছেন।