গোপালগঞ্জে বিলুপ্তির পথে খাল-বিলের দেশীয় মাছ

1155

দেশীয়-মাছ

এসএম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ থেকে : গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাকে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধির অভায়শ্রমে পরিণত করতে উপজেলার কোন খালে বিলে বা কোন সরকারি জলাশয়ে কোন প্রকারের চরপাটা, বাঁধ, ভেসাল জাল, কারেন্টজাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করা যাবে না কিংবা দেশে প্রচলিত কোন আইনের লংঘন করে মাছ শিকার করা যাবে না। যদি কেউ এ আদেশ বা পরামর্শ অমান্য করে বেআইনিভাবে মাছ শিকার করে তবে কোটালীপাড়ার খালে বিলে দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জনস্বার্থে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।

এমন একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান। এ গণবিজ্ঞপ্তিটি ব্যাপক প্রচারের জন্যও তিনি সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

দেশজ মাছ রক্ষার্থে এ ধরণের গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার অভিজ্ঞমহল। সেই সঙ্গে প্রকৃত মৎস্যজীবীরাও এতে খুশি হয়েছেন। কেননা এক শ্রেণির লোকজন খালে বা বিলে চরপাটা, ভেসাল জাল এবং কারেন্ট জালের সাহায্যে মাছের পোনা, বিশেষ করে মাছ বড় হবার আগেই ছোট অবস্থায় শিকার করে বিক্রি অথবা খেয়ে ফেলছে। এতে এলাকায় মাছের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না। আর তাই দিন দিন এলাকা থেকে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হবার পথে।

অথচ খাল-বিলে ভরা কোটালীপাড়া উপজেলায় এক সময় দেশীয় মাছের ভান্ডার ছিল। কিন্তু কারেন্ট জাল, ভেসাল জালসহ অন্যান্য অবৈধ উপায়ে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আর এ কারণে বাজারে দেশীয় মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। দেশীয় মাছের স্থলে এখন পুকুরে বা ঘেরে চাষ করা বিভিন্ন মাছে বাজার ভরে গেছে।

মৎস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত গোপালগঞ্জের বিভিন্ন বিল থেকে দেশীয় মাছ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে কই, শিং, সরপুটি, বোয়ালসহ নানা জাতীয় দেশীয় মাছ। গোপালগঞ্জে ১১৪টি বিল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল ও পুকুর। যেখানে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম নেয় দেশীয় মাছ। স্বাদের কারণে এখানকার উৎপাদিত দেশীয় মাছের সুনাম রয়েছে সর্বত্র।

এ জেলায় উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়েও ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হতো। জেলার অধিবাসীদের মধ্যে বড় একটা অংশ মৎস্যজীবী। জেলেরা বিগত কয়েক বছর দেশীয় মাছ তেমন একটা পাচ্ছেন না।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বন্যাবাড়ি মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি ওহিদ শেখ জানান, বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় মাছের প্রজনন এলাকা ও তাদের জন্য অভায়শ্রম গড়ে তোলার জন্য ২০০০ সালে টুঙ্গিপাড়ার বেন্নাবাড়ি মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছে এখানকার মৎস্য সমবায় সমিতি। সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই এই অভয়াশ্রমটিতে দেশীয় মাছের প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার সুফল এখানকার মানুষ পাচ্ছেন বলে জানালেন সমিতি প্রধান।

গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক বছর আগে জেলার বিভিন্ন স্থানে ২২টি মৎস্য অভায়শ্রম গড়ে তুলেছিল। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে তা আর ধরে রাখা যাযনি। যে স্বল্প পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া গেছে তা দিয়ে জেলার ৫ উপজেলায় ৫টি মাছের অভয়াশ্রম চালু রাখা গেছে। এলাকার মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করেছেন বলেও জানান ওই মৎস্য কর্মকর্তা।

তবে বরাদ্দের অভাবে যে সব অভয়াশ্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেখানে অর্থ বরাদ্দ করলে দেশীয় মাছের প্রাপ্যতা বাড়বে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

দেশজ মাছ রক্ষার্থে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মাহফুজুর রহমান জানান, মাছের পোনা যাতে ভেসাল জাল, চরপাটা কিংবা কারেন্ট জাল দিয়ে শিকার করে কেউ দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধিতে বাঁধা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। খালে বিলে মৎস্যজীবীরা অবলীলায় মাছ ধরতে পারবে। কিন্তু কেউ যাতে মাছের ছোট পোনা বড় হবার আগেই শিকার করতে না পারে সে জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোটালীপাড়ার সর্বত্র ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সবাইকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে সচেতন করার কাজও চলছে।

তিনি আরও বলেন, সবাই যদি সচেতন হয় তাহলে এ এলাকায় প্রচুর দেশজ মাছ পাওয়া সম্ভব হবে।

এলাকায় দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে আরও বেশি পরিমাণ মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলার প্রতি জোর দিয়েছেন জেলার মৎস্যজীবী ও মৎস্য সংশ্লিষ্টরা। সূত্র: এনবি

 

century-final-10

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন