গোলফল বিক্রি করে সংসার চলে দুই পা হারানো আব্দুর রহমানের

198

সুন্দরবনসহ বিশ্বের প্রায় সব ম্যানগ্রোভ বনেই প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় গোলপাতা গাছ। পাম জাতীয় এ উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Nypa fruticans। ঘরের ছাউনি হিসেবে গোলপাতার ব্যবহার হচ্ছে বহু বছর আগে থেকে। তবে ফলও খাবার হিসেবে প্রচলিত রয়েছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে।

গোল আকৃতির কালো রঙের এ ফলটির ভেতরের অংশ দেখতে অনেকটা পানি তালের মতো এবং স্বাদও পানি তালের মতোই। সুন্দরবনে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদের ভেতর গোলপাতাই বেশি দেখা যায়। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী ও খাল-বিলের পাশে প্রচুর পরিমাণ গোলপাতা গাছ জন্মায়। স্থানীয়রা এর গোলফল খেয়ে থাকলেও বাজারে বিক্রয়র চল ছিল না। তবে এবার ফলটির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে।

বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে গত চার বছর ধরে গোল ফল বিক্রি করেন সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো আব্দুর রহমান শেখ। বাগেরহাটের বিভিন্ন নদ-নদীর পাড়ে জন্মে থাকা গোলপাতা গাছ থেকে গোলফল সংগ্রহ করে প্রতি পিস ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন তিনি। ষাটগম্বুজের সামনে ফলটি বিক্রি করে গোলফলকে নিয়ে এসেছেন পর্যটকদের সামনে। ফলে তার নিজের আর্থিক স্বচ্ছলতাও যেমন ফিরেছে, তেমনি পর্যটকরা চিনেছেন ম্যানগ্রোভের অপ্রচলিত ফলটি। এ ফল বিক্রি করে প্রতিদিন তার দেড় থেকে ২০০০ টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছেন আব্দুর রহমান শেখ।

তিনি বলেন, একসময় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতাম। ৯ বছর আগে দুর্ঘটনায় পা হারানোর পরে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হতো। একসময় মনে হয় পর্যটন স্পটে অপ্রচলিত সুন্দরবনের খাবার গোলফল বিক্রি করলে লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। পরে কিছু গোলফল পরীক্ষামূলকভাবে বিক্রি শুরু করি। ক্রেতাদের সাড়া পেয়ে পুরোদমে ব্যবসায় নেমে পড়ি। বাগেরহাটের বিভিন্ন নদ-নদীর পাশ থেকে গোলফল সংগ্রহ করি। অনেক সময় কিছু গৃহস্থবাড়ি থেকেও কম দামে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করি। স্ত্রী ও ছোট ছেলে আমাকে সহযোগিতা করে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকার ফল বিক্রি করি। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধের দিন হওয়ায় দর্শনার্থী বেশি আসে। ফলে একটু বেশি বিক্রি হয়। ওই টাকায় আমার সংসার বেশ ভালোই চলছে।

তিনি আরও বলেন, ইচ্ছে করলে ভিক্ষা করে খেতে পারতাম। কিন্তু মানুষের কাছে হাত না পেতে, ফল বিক্রি করে খাই। এই বয়সে আমি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে এই অপ্রচলিত ফলটি সারাদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে এনেছি। সব মিলিয়ে গোলফল বিক্রি করে ভালো আছি।

ষাট গম্বুজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা গ্রামের শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ছোট বেলায় আমরা গাছ থেকে পেড়ে গোলফল খেতাম। কিন্তু এখনকার বাচ্চারা গোলফল সম্পর্কে জানেই না। আমার ছেলে ও আমি দুইজনই খেলাম। শৈশবের কথা মনে পড়লো।

কেরানীগঞ্জ থেকে আশা দর্শনার্থী শেখ রাসেল জানান, ষাট গম্বুজ দেখতে এসেছিলাম। এসে দেখলাম এক বৃদ্ধ সুন্দরবনের গোলপাতার গোল ফল বিক্রি করছেন। এই প্রথম এই ফল খেলাম। গোলপাতার ফল যে খাওয়া হয় এটা আগে জানতাম না। স্বাদের প্রশ্নে তিনি জানান, অনেকটাই পানিতাল ফলের মতো খেতে।

অন্য আরেক দর্শনার্থী আলিমুজ্জামান বলেন, ছোটবেলায় গোলফল খেয়েছিলাম। স্বাদও ভুলে গিয়েছিলাম। একজন প্রতিবন্ধী লোক এই অপ্রচলিত ফলটি বিক্রি করছেন দেখে ভালো লাগলো।

গোলফল বিক্রেতা আব্দুর রহমানের ছোট ছেলে রাসুল শেখ জানান, বাবা দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। তিনি কিছু করতে পারতেন না। আমরা লেখাপড়াও করতে পারি নাই। বাবা পা হারানোর আগে ভ্যান চালাতেন। এখন আমরা গোলফল কেটে আনি, আব্বা বিক্রি করেন।