কৃষক থেকে কৃষি গবেষক আতোয়ার রহমান

89

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ফুলদীঘি-কানাইপুর গ্রামের আতোয়ার রহমানের সাফল্যে তার সুনাম এখন এলাকার সর্বসাধারণের মুখে মুখে। লেখাপড়া বেশিদূর না এগোলেও কেবল অধ্যবসায় আর ইচ্ছাশক্তির জোরে কৃষি গবেষণায় আত্মনিয়োগ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জয়পুরহাটের এ অদম্য কৃষক। আবিষ্কার করেছেন অধিক উৎপাদন ক্ষমতার সুগন্ধি চিনি আতপসহ নানা জাতের ধান।

জানা গেছে, আতোয়ার রহমানের বাবার মৃত্যুর পর চরম অভাবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে মানুষের বাড়িতে দিন মজুরির কাজ নেন তিনি। যেদিন কাজ জুটত না, সেদিন এক বেলা না খেয়ে থাকতেন, আরেক বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে কোনো রকমে জীবন বাঁচাতেন। সেই ক্ষুধার জ্বালা থেকে অধিক ফলনশীল ফসলের খাদ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন আতোয়ার। দীর্ঘ ১০ বছর সাধনা আর গবেষণা করে ১৯৯৫ সালে অধিক উৎপাদনশীল ধান তৈরি করতে সমর্থ হলেও সেই জাতটি দেখা গেল সুগন্ধিযুক্ত চিনি আতপ ধান। এরপর অন্যান্য উচ্চফলনশীল জাতের ধান উদ্ভাবনীতে আত্মনিয়োগ করেও সফল হন তিনি।

আতোয়ার রহমান জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ঘোর মফস্বল ফুলদীঘি হাটের পার্শ্ববর্তী কানাইপুর গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। দরিদ্র পরিবারের আতোয়ারের বাবা ১৯৮৫ সালে মারা গেলে অভাবের কারণে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি তিনি।

আতোয়ার রহমান আরও বলেন, ‘একাগ্রতা, সাধনা আর ব্যবহারিক শিক্ষার জোরে আমি গবেষণায় সফল হয়েছি। পুঁজির অভাবে কৃষকদের চাহিতামতো বীজ সরবরাহ করতে পারি না। বর্তমানে প্রচলিত ধানবীজ চাষাবাদ করে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশে ১ বিঘা) ১৮ থেকে সর্বোাচ্চ ২২ মণ ধান উৎপাদন করা সম্ভব, কিন্তু আমার উৎপাদিত ধান বীজ থেকে বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩৩ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে।’ এসব জাতের ধানের নামও দিয়েছেন নিজের পছন্দমতো। যেমন বাংলার বিখ্যাত অ্যারোমেটিক রাইস গোল্ড, সাধারণ অ্যারোমেটিক রাইস গোল্ড, চ্যাম্পিয়ন অ্যারোমেটিক রাইসসহ বেশ কয়েক প্রকার ধান।

আতায়ারের আবিষ্কৃত উচ্চফলনশীল ধান বীজ সংগ্রহ করে সেগুলো চাষাবাদ করে আশাতিত লাভ করেছেন বলে জানান বিভিন্ন এলাকার কৃষক।

জয়পুরহাট ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান জানান, ‘একই উপজেলার কানাইপুর গ্রামের আতোয়ার হোসেন বেশ কয়েক বছর ধরে কৃষি গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আতোয়ারকে সাধ্যমতো সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’