রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে: শেষ সময়ে আমনবীজের সংকট দেখা দিয়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজের অধিকাংশ দোকানে ঝুলছে তালা। চাহিদার ১০ ভাগের ১ ভাগও পূরণ করতে পারেনি তারা। বীজ সংকটের কারণে আমন চাষ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষক। আর এই সংকট কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে আমনের বীজ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৩৪০ টাকার বীজের বস্তা কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ১১শ টাকায়।
উপজেলার কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা ও ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে বীজ সংকটের সত্যতা পাওয়া গেলেও অভিযোগ নারাজ বিএডিসির ময়মনসিংহের আঞ্চলিক বীজ বিপণন কেন্দ্র।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে হাউব্রিড জাতের ১২৫ হেক্টর, উপশী জাতের ১৮ হাজার ৯৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপশীজাতের বীজের চাহিদা ৫শ মেট্রিক টন। কিন্তু বিএডিসি চাহিদার ১০ ভাগের ১ ভাগও পূরণ করতে পারেনি। ২০টি ডিলারের মাধ্যমে বীজ উত্তোলন করা হয়েছে মাত্র ৪৭ মেট্রিক টন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান বলেন, “প্রধানত তিনটি কারণে এবার আমনের বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রথমত, এবার বিএডিসি চাহিদার চেয়ে অনেক কম বীজ উৎপাদন করেছে। দ্বিতীয়ত, অকাল বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে বোরো ধানে ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। তৃতীয়ত, এ বছর বন্যার কারণে হাওরে ধান না হওয়ায় কয়েক বছরের তুলনায় ধানের দাম বেশি। এ কারণে স্থানীয় কৃষকেরা বীজধান সংরক্ষণ না করেই ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। কৃষকের ঘরে বীজ না থাকায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।”
স্থানীয় এলাকাবাসী ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএডিসির বীজের অধিকাংশ দোকানে ঝুলছে তালা। বিএডিসির শর্তানুযায়ী, এসব ডিলারদের দোকানের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি লালসালু। এবার বীজ বিক্রির ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি বিভাগের ছিল না কোনো মনিটরিং। ফলে কয়েকটি দোকানে ক্যাশমেমো থাকলেও প্রকৃত কৃষকের তালিকা নিয়ে রয়েছে সংশয়। ডিলারদের দোকানে বীজ না থাকলেও বাইরে ৩৪০ টাকা মূল্যের ১০ কেজির বীজ ধানের বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১ হাজর ২০০ টাকায়। ডিলারের দোকানে বীজ না থাকায় উপজেলার স্থানীয় হাটে কৃষকের সংগৃহীত বীজের বাজারে ছিল উপচেপড়া ভিড়। শ্যামগঞ্জ চরপাড়ার তোতা মিয়া জানান, খুচরা বীজের দোকানে বিএডিসির সিলযুক্ত সবুজ ট্যাগের ব্রি-ধান-৪৯ জাতের ১০ কেজি ধানের বীজ কিনেছেন ১ হাজার ১০০ টাকায়। কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, গৌরীপুর বাজারে দোকান থেকে ৬শ টাকা দিয়ে ১০ কেজি ধানের বীজ কিনেছেন।
একই কথা বললেন নওগাঁ গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিনসহ আরো অনেক কৃষক।
কৃষকদের অভিযোগ ডিলারের দোকানে বীজ নেই, কিন্তু খুচরা দোকানে এ বীজ এলো কোথা থেকে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরীপুর সার-বীজ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোক্তার উদ্দিন চৌধুরী জানান, বরাদ্দকৃত বীজ ডিলাররা ন্যায্য মূল্যে কৃষকদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে তাই এখন কোনো ডিলারদের কাছে বীজ নেই। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গৌরীপুরের বাইরে থেকে বিএডিসির আমনের বীজ সংগ্রহ করে চড়া দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছে। এদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন।
বীজের ডিলার মোতালিব বিন আয়েত বলেন, “আমি দুই মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই তা কৃষকদের কাছে ন্যায্য দামে বিক্রি করে দেই। মূলত চাহিদার তুলনায় বীজের বরাদ্দ কম থাকায় শেষ মুহূর্তে এসে কিছুটা বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে অতিরিক্ত মূল্যে বীজ বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়।”
বীজের সংকট বিষয়ে বিএডিসির ময়মনসিংহের আঞ্চলিক বীজ বিপণন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আইয়ুব উল্লাহ বলেন, শেষ মুহুর্তে যেটুকু বীজ ধানের সংকট দেখা দিয়েছিল সেটার চাহিদা পূরণ হয়েছে। এখন কোথাও বীজের সংকট নেই। আর ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি দামে বীজ বিক্রি না করতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান হচ্ছে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম