চট্টগ্রামে খাদ্য অধিকার ক্যাম্পাইন অনুষ্ঠিত

297

ফার্মস অ্যান্ড ফার্মার২৪.কম ডেস্ক: জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল’র আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে খাদ্য নিরাপত্তা ও দুর্যোগ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সরকার ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা, টেস্ট রিলিফ, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে চাল ও গম বিতরণ করছে।

শুধু আয়ের ভিত্তিতে নয়, মৌলিক চাহিদা পূরণের খরচের ভিত্তিতে বাংলাদেশে বর্তমানে ২৪.৫% শতাংশ মানুষ (৩ কোটি ৮৫ লাখ) দরিদ্র যারা দৈনিক ২ হাজার ১ শ’ ২২ ক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। এদের মধ্যে দৈনিক ১ হাজার ৮০৫ ক্যালরি গ্রহণের জন্য খাবার কিনতে প্রয়োজনীয় আয় করতে পারে না প্রায় ২ কোটি বা ১২.১% শতাংশ মানুষ, যারা অতি দরিদ্র।

বাংলাদেশের সংবিধানে ১৫ অনুচ্ছেদ (ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা। ১৯৪৮ সালে গৃহিত জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা অনুচ্ছেদ ২৫(১) ধারা অনুযায়ী “প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের এবং তার পরিবারের কল্যাণ ও সুস্বাস্থের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সেবাসহ জীবনযাত্রার পর্যাপ্ত মানের অধিকার রয়েছে।

এছাড়াও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং জাতিসংঘের Sustainable Development Goal(SDG)’র অধীন ২নম্বর ক্ষুদামুক্তিসহ সকল লক্ষ অর্জনে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।

অন্যদিকে দেশের হাওর অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটির সাজেক ও বান্দরবানে পাহাড়ি এলাকায় খাদ্য ঘাটতি কারণে নিঃস্ব জনগণের কল্যাণে সরকারের গৃহিত কর্মসূচি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ এ সমস্ত কর্মসুচি থেকে তেমন সুফল পাচ্ছে না।

অন্যদিকে আসন্ন পবিত্র রমজানে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর অশুভ তৎপরতার কারণে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করে মূল্যবৃদ্ধির অপতৎপরতার কারণে ইতোমধ্যেই সাধারণ জনগণের মোটা চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে আছে।

১৮ মে নগরীর চান্দগাঁওস্থ আইএসডিই বাংলাদেশ মিলনায়তনে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও ক্যাব চট্টগ্রামের উদ্যোগে খাদ্য অধিকার ক্যাম্পইন উপলক্ষে গণজমায়েত শেষে আলোচনা সভায় উপরোক্ত মতামত ব্যক্ত করা হয়।

ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ এম তৌহিদুল ইসলাম, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির মহানগর সভাপতি সুমাইয়া সালাম, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক প্রধান রফিকুল ইসলাম মজুমদার, ড্রিংকিং ওয়াটার ওয়ার্নাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়সাল আবদুল্লাহ আদনান, অন্বেষা চট্টগ্রামের আবুল কাসেম, জেলা কৃষক লীগের সেলিম সাজ্জাদ, ব্যবসায়ী সেলিম জাহাঙ্গীর, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক জানে আলম, অধ্যাপক শাহওেয়াজ আলী মির্জা, সংসপ্তকের অগ্রদুত দাশগুপ্ত, বিবিএফ এর সোহাইল উদদোজা, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ, ইলমার ফোরকান মাহমুদ, সিএসডিএফ এর শাম্পা কে নাহার, ইপসার শাহীন আক্তার ও ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, হাওর অঞ্চলে কৃষকসহ দরিদ্র মানুষের জীবনে এখন প্রধান সংকট খাদ্য। পাশাপাশি সমগ্র দেশে খাদ্যসহ কৃষি পণ্যের ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধি, আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং খাদ্যে ভেজাল বৃদ্ধিতে হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা, ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত মানুষের জন্য সরকার ঘোষিত খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, চাহিদা অনুসারে হাওরসহ খাদ্য সংকটাপন্ন এলাকায় ১০ টাকা দরে চাল বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা, পরবর্তী মৌসুমে কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সার, বীজসহ কৃষি উপকরণ সহায়তা বিতরণ, কৃষকদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান, উন্মুক্ত জলমহালের ইজারা বাতিল করে জেলে-কৃষকদের অবাধে মাছ ধরার ব্যবস্থা করা, বর্ষা মৌসুমে ব্যাংক ও এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ করা, আগামী মৌসুমের ধান ওঠার পুর্ব পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৮ লাখ পরিবারের জন্য বিশেষ ভিজিএফ চালু রাখা, প্রয়োজনীয় পরিমাণ আমদানি ও বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চালের বাজার স্থিতিশীল করা, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, রমজানকে সামনে রেখে সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সমন্বিত কর্মসুচি চালু রাখা, খাদ্যে ভেজালকারীদের কঠিন ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।