চট্টগ্রামে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’র বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত

294

চট্টগ্রামে খাদ্য অধিকার

মো. জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম থেকে: সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ি দেশের ৪ কোটি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে এবং এর মধ্যে ২ কোটি লোক অতিদরিদ্র। দৈনিক ২ হাজার ১ শত ২২ ক্যালরি খাবার কিনতে অক্ষম তারাই গরীব। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ ২০৩০(এসডিজি)’র অন্যতম লক্ষ হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান এবং আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ক্ষুধামুক্তির অঙ্গিকার। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ খাদ্য অধিকার ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়ে সমর্থন দিয়ে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে এসডিজি অনুমোদন করেছেন। আর এসডিজি বাস্তবায়নে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গিকার ও সহযোগিতামুলক আইন ও নীতি। নীতি ও আইন যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ অর্জন সম্ভব। তাই এসডিজির মুল লক্ষ অনুযায়ি দেশে সবার খাদ্য নিশ্চিত করতে দ্রুত খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন দরকার। সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্ঠির নিরাপত্তা বিধান ও খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ০৯ এপ্রিল নগরীর জুবলী রোড়স্থ তাইওয়া রেস্টুরেন্টে প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। খাদ্য অধিকার আন্দোলন চট্টগ্রামের সভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী ও যুগ্ম সম্পাদক রতন সরকার। আলোচনায় অংশ নেন খাদ্য অধিকার আন্দোলন কুমিল্লার সভাপতি মাহবুব মোর্শেদ, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, বি.বাড়ীয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, বান্দারবানের সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় তঞ্চ্যাংগা, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির জেসমিন সুলতানা পারু, জান্নাতুল ফেরদৌস, অজয় মিত্র শংকু, আলহাজ আবদুল মান্নান, তৌহিদুল ইসলাম, ফারহানা জসিম, জানে আলম প্রমুখ।

বক্তাগণ বলেন, বর্তমান সরকার ও বিভিন্ন জাতীয়-আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগের কারণে দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হলেও নিরাপদ খাদ্যের বেলায় মারাত্মক হুমকিতে আছে। বাংলাদেশের সংবিধানে সবার জন্য খাদ্য অধিকারের কথা বলা হলেও এ পর্যন্ত সকলের জন্য খাদ্য অধিকার আইন প্রণীত হয়নি। ২০০৭ সালে আঞ্চলিক খাদ্য নিরাপত্তা সংরক্ষণাগার হিসাবে সার্ক ফুড ব্যাংক গঠন করা হয়। খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আর সে কারণে বিগত বিশ বছরে দেশে খাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও অনেক বেশি, মোটা চালের দাম বিগত ০১ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্দি পেয়েছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যের মূল্য সেভাবে বাড়েনি। অন্যদিকে প্রকৃত কৃষক তার উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না, যা মধ্যস্বত্বভোগি ও ফড়িয়ারা এবং খাদ্য ব্যবসবায়ীরাই সিংহভাগ হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে দেশীয় কৃষক প্রতিবছরই লোকসান গুণছে। সেকারণেই জনগণের স্বার্থে সবার জন্য খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার তাগিদ দেন।

সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন, নিরাপদ খাদ্য আইনের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ভেজালমুক্ত ও নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম জোরদার, স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য রেশনিং ব্যবস্থা এবং সরকারি বণ্টন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, কৃষিতে ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং প্রান্তিক কৃষক ও বর্গাচাষিদের সরাসরি ভর্তুকির আওতায় আনা, প্রান্তিক কৃষক এবং বর্গাচাষিদের নিয়ে সমবায় গড়ে তোলার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার, সমবায়ভিত্তিক কৃষিব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, কৃষিপণ্যের সঠিক মূল্য নিশ্চিতকরণ, সকল পর্যায়ে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, নারী কৃষকদের স্বীকৃতি ও তাদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, পশু পালনকারী, জেলেদের মতো জনগোষ্ঠীর জন্য ভূমি নিরাপত্তা, শিক্ষা, আর্থিক লেনদেনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার উৎস নিশ্চিতকরণ, খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সরকারকে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ নিশ্চিত করা, কৃষি উৎপাদনে পরিবেশের ভারসাম্য নিশ্চিত করে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিকুল আবহাওয়া, বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে ফসল টিকে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করা; ২০২০ সালের মধ্যে বীজ, শস্য, পশুপালন, পশুর জিনগত বৈচিত্র বাড়ানোয় কাজ করা; বিশ্ব খাদ্য পণ্যের বাজারে দাম স্থিতিশীল ও ক্রেতার হাতের নাগালের মধ্যে রাখতে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ, কৃষিভিত্তিক গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার ৩০ জন অংশগ্রহণ করেন।