চট্টগ্রামে পোল্ট্রি সেক্টরে সরকারি তদারকি জোরদারে ভোক্তাদের করণীয় নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

351

ক্যাব

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছেন, এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। সুস্বাস্থ্য ছাড়া উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর সম্ভব হবে না। তবে প্রযুক্তির আধুনিকায়নের সাথে সাথে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে প্রচণ্ড আকারে। মানুষের জীবন জীবিকা ও খাবারের বৈচিত্র যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, সেখানে খাবারের অনেক নতুন নতুন খাদ্য তালিকা চলে আসছে কিন্তু মানসম্মত খাবার ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ খাদ্য ব্যবসায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের নানা কারসাজি ও অতিমুনাফার প্রবণতার কারণে মাননিশ্চিত না করে খাদ্য বাজারজাত করা হচ্ছে। বিষয়টি সকলের জন্য ভীতির কারণ।

তিনি বলেন, জনশক্তিতে বাংলাদেশ ডেমুগ্রাফি ডেভিডেন্ট ভোগ করছে, কিন্তু নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে না পারায় এই ডেভিডেন্ট ধরে রাখা কঠিন হবে এবং ৩০ বছর পরে বয়স্ক লোকের সংখ্যা প্রচন্ড হারে বেড়ে যাবে। যার মূলে রয়েছে নিরাপদ ও মানসম্মত খাবারের ঝুঁকি। তবে সরকারের বাজার তদারকি, সেবা সার্ভিসের অব্যবস্থাপনা রোধ করতে হলে ক্যাবের মতো নাগরিক পরীবিক্ষণ আরো জোরদার হওয়া দরকার। সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন কিন্ত নাগরিক সমাজের সক্রিয় ও যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে সরকারের সে উদ্যোগে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না।

গত শনিবার ৮ সেপ্টেম্বর নগরীর থাইওয়া রেস্টুরেন্টের কনফারেন্স হলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম এর পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে চট্টগ্রামে ‘পোল্ট্রি সেক্টরে সরকারি তদারকি জোরদারে ভোক্তাদের করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান উপরিউক্ত মন্তব্য করেন।

ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জমান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সেতু ভূষণ দাস।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাকিবুল ইসলাম ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের আইবিপি প্রজেক্ট কো-অডিনেটর মোস্তফা কামাল। আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, ক্ষুদ্র খামারী রুখসানা আখতারুন্নবী, মোহাম্মদ ইউসুপ, ফিড বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক আল রহমান, ক্যাব নেতা সেলিম জাহাঙ্গীর, আনোয়ার হোসেন, জহুরুল ইসলাম, রুবি খান, মুক্তা শেখ মুক্তি, ক্যাব চট্টগ্রামের ডিপিও জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।

কর্মশালায় বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকারের নানামুখি কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও কৃষিতে সাফল্য অনেক বেশি। যার কারণে গার্মেন্টস সেক্টরের পর পোল্ট্রি শিল্প একটি বিপুল সম্ভাবনাময় শিল্প হিসাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। মৎস্য উৎপাদনে দেশ বিশ্বে ৪র্থ স্থানে। কিন্তু জাতীয় অর্থনীতিতে বিপুল অবদানের পরও পোল্ট্রি শিল্পে সরকারের প্রণোদনা ও এখাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়নি। ফলে একসময় বিপুল তরুণ উদ্যোক্তা পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ করলেও ক্রমান্বয়ে লোকসানের কারণে এ শিল্প থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। আর ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীরা যদি হারিয়ে যায় তাহলে দেশের সামগ্রিক আমিষের যোগান সরবরাহ অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যের বাজারের মতো পোল্ট্রি শিল্পও তখন গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডেকেটের হাতে চলে যাবে।

কর্মশালায় পোল্ট্রি সেক্টরে বর্তমান সরকারি নজরদারি জোরদারে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হয়। প্রাণিসম্পদ অফিসের সক্ষমতা, জনবল ও লজিস্টিক সমস্যা, প্রাণিসম্পদ সেক্টরের জন্য আইন ও বিধির স্বল্পতা, পোল্ট্রি খাতে নজরদারি প্রতিষ্ঠায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণহীনতা, পোল্ট্রি খাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অনিয়মিত, ভোক্তাদের অসচেতনতা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য, অনেক সময় গুজব ছড়ানো, ক্ষুদ্র প্রান্তিক খামারীদের সরকারি প্রণোদনা নাই, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারী ও বৃহৎ উদ্যোক্তাদের জন্য একই ধরনের নীতিমালা, সরকারি কর ও অন্যান্য নিয়মকানুন, ভোক্তা ও ক্ষুদ্র খামারীদের প্রশিক্ষণ সুবিধা কম, পোল্ট্রি ফিডের মান যাচাইয়ে স্থানীয়ভাবে সুবিধার অভাব চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে নাগরিক পরীবিক্ষণ বাড়ানো, প্রাণিসম্পদ অফিসের মতো অন্যান্য সরকারি সেবা সংস্থার কার্যক্রমে ক্যাব, মিডিয়ার মতো নাগরিক পরিবীক্ষণ সংস্থাগুলির অংশগ্রহণ বাড়ানো, ভোক্তাদের মাঝে আরো বেশি সচেতনতা ও শিক্ষা প্রদান করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনা, পোল্ট্রি ফিড, বাচ্চার মূল্য নিয়ন্ত্রণ, কম সুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান, বিদ্যুৎ বিল, সরকারি লাইসেন্স ও মান ফিস কমানোর দাবি জানানো হয়।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন