প্রক্রিয়াজাতকরণ জটিলতায় শিং-মাগুর জাতীয় মাছ আমদানি করছে না যুক্তরাষ্ট্র

890

 

শিং-মাগুর

দেশে মাছ রফতানিতে জটিলতা বেড়েছে। ত্রিপুরার আগরতলার ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ভারতে মাছ রফতানি বন্ধ রয়েছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশ থেকে শিং, মাগুর জাতীয় মাছ আমদানি করছে না। একইসঙ্গে নানা অজুহাতে খামারে চাষ করা মাছ নেয়া আপাতত বন্ধ রেখেছে সৌদি আরব।

বিষয়টি আলাপ আলোচনা করে নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মৎস্য অধিদফতর ও মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বছরে ৫০টির মতো দেশে ৭০ হাজার মেট্রিক টনের কাছাকাছি মাছ রফতানি করে বাংলাদেশ। যা থেকে আয় হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগরতলার ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্বে সম্প্রতি সেদেশে মাছ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ফলে কয়েক টন মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২৫ লাখ টাকারও বেশি। সেখানকার ব্যবসায়ীদের দু’গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মাছ রপ্তানি করতে পারছেন না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় মৎস্য দফতরের একজন পরিদর্শক হাজির থাকতে হবে। কিন্তু তা নাকি করা হচ্ছে না। তাই তারা মাছ নিচ্ছে না। আবার নানা অজুহাতে খামারে চাষ করা মাছ নেওয়া আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে সৌদি আরব।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর কাওরান বাজারের মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সোনালী ট্রেডার্সের মালিক আফজাল হোসেন বলেন, এ ধরনের জটিলতা নতুন কিছু নয়। কিছু দিন পরপরই মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়। এটি আমাদের পক্ষ থেকে নয়, আমদানিকারক দেশের ব্যবসায়ী ও সরকার উভয়ের পক্ষ থেকেই এই জটিলতা সৃষ্টি করা হয়।

আরেক প্রতিষ্ঠান মায়ের দোয়া মৎস্য ভাণ্ডারের মালিক নরেশ চন্দ রায় বলেন, বংলাদেশ থেকে যারা মাছ কেনেন তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়, আমাদের প্যাকেজিং ভালো না। আবার কখনও বলা হয়, আমাদের দেশ থেকে রফতানি করা চিংড়িতে ক্ষতিকারক ভাইরাস পাওয়া গেছে। আবার বলা হয় রপ্তানি করা চিংড়িতে ওজন বাড়ানোর অপকৌশল হিসেবে মাছের শরীরে জেলি বা লোহা প্রবেশ করানো হয়েছে। আরও বলা হয়, আমাদের মাছ মান সম্পন্ন নয়। এমন নানা অভিযোগ।

প্রসঙ্গত, গত এক দশকে বাংলাদেশে চাষের মাধ্যমে মিঠা পানির মাছ উৎপাদন ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ১৩৫ গুণ। এক যুগ ধরে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তবে সামুদ্রিক মাছ আহরণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫তম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা (এফএও) এর ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে। এর মধ্যে প্রথম দেশটি হবে বাংলাদেশ। তবে দেশে বদ্ধ জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়লেও মুক্তভাবে মাছ উৎপাদন কমেছে।

মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, এটি কোনও জটিল সমস্যা নয়। আলোচনা চলছে, সমাধান হয়ে যাবে। এতে রপ্তানিতে কোনও প্রভাব পড়বে না।

মৎস্য অধিদফতর সূত্র মনে করে মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওরে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় মুক্তভাবে মাছ উৎপাদন কমেছে।

মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৩-৮৪ সালে মৎস্য খাতে উন্মুক্ত জলাশয়ের অবদান ৬৩ শতাংশ। ২০১২-১৩ সালে এটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশে। বর্তমানে এর অবস্থান আরও নিম্নমুখী।

মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পোনা অবমুক্তকরণ, বিল নার্সারি স্থাপন ও মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্তকরণের ফলে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭১৫টি বিল নার্সারি স্থাপন করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরেই স্থাপন করা হয়েছে ২০৬টি। এর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদন হচ্ছে এবং এসবে অনেক বিপন্ন প্রায় মাছের আবির্ভাব ঘটেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, বর্তমান সরকারের যথাযথ উদ্যোগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন মৎস্য এবং মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। এতে সরকারের আয় হয়েছে চার হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে মাছের উৎপাদন ছিল ২৭ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন। মৎস্যবান্ধব সরকারের উন্নয়নমুখী বহুবিধ উদ্যোগ ও সেবায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) মধ্যেই বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। সূত্র: বিটি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন