চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (চমেক) হঠাৎ করে কিডনি ডায়ালিসিসের মূল্যবৃদ্ধি ও এর প্রতিবাদে অংশগ্রহনকারীদের ওপর আইন শৃংখলা বাহিনীর হামলায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিপুল সংখ্যক মৃত্যপথযাত্রী কিডনী রোগীদের ডায়ালিসিস ফিস বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আত্মঘাতি এবং প্রতিবাদকারীদের ওপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হামলাকে ন্যাক্কারজনক বলে মন্তব্য করে অবিলম্বে এধরনে ঘৃনিত ও জঘন্য সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং হামলার মদদদাতাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (চমেক) এ কিডনি ডায়ালিসিসের মূল্যবৃদ্ধি ও এর প্রতিবাদে অংশগ্রহনকারীদের ওপর আইন শৃংখলা বাহিনীর হামলার ঘটনায় এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত দাবি জানান।
১৫ জানুয়ারি ২০২৩ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মৃত্যপথ যাত্রী কিডনীরোগীদের কিডনি ডায়ালিসিস একটি অত্যন্ত মানবিক ও জীবনরক্ষাকারী মানবিক স্বাস্থ্যসেবা। কিডনি মানবদেহের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি বিকল হলে শরীর ফোলা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, দুর্বলতা, রক্তশূন্যতাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়ার পাশাপাশি দ্রæত মৃত্যবরণ হয়। কিন্তু কিডনী রোগীরা নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে না পারলে দ্রæত মৃত্য বরণে বাধ্য হন। যেখানে অনেক দরিদ্র রোগীদের পক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (চমেক) গিয়ে কিডনি ডায়ালিসিসের মূল্য পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে কিডনি ডায়ালিসিসের মূল্য একলাফে ৫-৭ গুনবৃদ্ধি করা কোন সুস্থ ও শুভ বৃদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাজ হতে পারে না। বর্তমান সরকার, বিশেষ করে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী একজন মানবিক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিশে^ সমাদ্রিত হয়েছেন, সেখানে দরিদ্র কিডনী রোগীদের ডায়ালিসিস ফিস এভাবে একলাফে ৫-৭গুন বাড়ানোর মানবিক প্রধান মন্ত্রীর প্রতি অবজ্ঞার সামিল। সরকার অনেক অপ্রয়োজনীয় খাতে ভর্তুকি প্রদান করছেন, দরিদ্র কিডনী রোগীদের এই জীবনরক্ষাকারী মানবিক সেবাটি অব্যাহত রাখতে এখাতে প্রয়োজনে ভর্তুতি অব্যাহত রাখাতে বাঁধা কোথায়?
নেতৃবৃন্দ ডায়ালিসিসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অংশগ্রহনকারীদের ওপর আইন শৃংখলা বাহিনীর হামলাকে ন্যাক্কারজনক বলে মন্তব্য করে বলেন, জনগনের করের টাকায় তাদের বেতন-ভাতা হয়। আর একটি মানবিক দাবি জানাতে যদি তাদের ওপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন চড়াও হয়, তাহলে তার চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কিছু হতে পারে না। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির যন্ত্রনায় মানুষ একদিকে নিঃস্ব হয়ে আছে। সেখানে চিকিৎসাসহ অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার ডায়ালিসিসের খরচ যোগাতে গিয়ে একেবারে ফতুর হয়ে গিয়েছে। তাই চট্টগ্রাম মেডেকেল কলেজ ও হাসপাতালে কিডনি ডায়ালিসিস সেবার পরিধি বৃদ্ধির জন্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহনের আহবান জানান। একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে মানবাধিকার ও মানবিক বিষয়ের ওপর শুন্য সহনশীলতা প্রদর্শনের দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে(চমেক) এতদাঞ্চলের ৫ কোটি মানুষের উচ্চতর চিকিৎসার ক্ষেত্রে একমাত্র নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হলেও প্রতি পদে পদে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মকর্তা, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপেশাদার আচরণ, নার্স ও চিকিৎসকগনের দায়িত্বপালনে অবহেলা, সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা নানা সময় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হলেও প্রতিকারের দৃষ্ঠান্ত কম। ইতিপুর্বে দুদক কয়েকবার গণশুনানী করেও পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে পারে নি। একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এধরনের আচরণ কাংখিত নয়। নেতৃবৃন্দ কম খরচে ডায়ালিসিসের সুবিধা নিশ্চিতসহ রোগীদের প্রতি মানবিক আচরণ ও সত্যিকারের মানবিক সেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।