চাষের উন্নতি করতে ক্ষেতে আনা হয় পোকামাকড়!

353
ছবি: ডিডব্লিউ
ছবি: ডিডব্লিউ
ছবি: ডিডব্লিউ

আজকের বিশ্বে খাদ্যের বেড়ে চলা চাহিদা মেটাতে বিশাল আকারে কৃষিকাজ চলছে। সার, কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করে দ্রুত ফসল তোলার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। জার্মান বিজ্ঞানীরা পোকামাকড় আকর্ষণ করে এর এক বিকল্প পদ্ধতি তুলে ধরছেন।

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কাছের একটি শহরের খেতে নিয়মিত কীটপতঙ্গ পর্যবেক্ষণ করেন। কীটপতঙ্গ দূর করার বদলে কৃষিকাজকেই তাদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তারা। সবার আগে খেতের আলের দিকে চোখ চলে যায়। ঝোপঝাড় ও জংলি ফুল দিয়ে সাজানো সেই সীমানা।

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর টোমাস ড্যোরিং ও তার টিম এভাবে খেতে আরও কীটপতঙ্গ আকর্ষণ করতে চান। সেই ঝোপের মধ্যে ৫০টিরও বেশি প্রজাতির গুবরে পোকা শীতযাপন করে। বসন্তকালে তারা আবার জেগে উঠলে খেত বেশি দূরে থাকে না।
প্রো. ড্যোরিং বলেন, ‘‘এটা এক ধরনের গুবরে পোকা, সেটি নানা রকম অনিষ্টকারী কীট খেয়ে ফেলে। তাদের বিশাল ঝাঁক খেতের উপর উড়ে বেড়িয়ে সেই সব কীট ধ্বংস করে।

কৃষি পরিবেশবিদরা খেতের ধারে এমন সব উপকারী পোকামাকড়ের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেন, যারা ক্ষতিকারক কীট খেয়ে ফেলে। ফলে কীটনাশকের আর প্রয়োজন পড়বে না বলে তাদের আশা।

প্রো. টোমাস ড্যোরিং বলেন, ‘‘এখানেই লেডিবাগ প্রজাতির শূককীট রয়েছে, যারা অ্যাফিড বা জাবপোকা খায়। সার্বিক একটা প্রণালি হিসেবে আমরা উপকারী পোকামাকড়ের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে পারি। তবে তাদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে না। তা সত্ত্বেও আমরা গোটা কাঠামোকে স্থিতিশীল করে তুলতে পারি।’’

ক্ষেতের ধারে গবেষকরা ফুলের সারি সৃষ্টি করেছেন। ফুলগুলি একসঙ্গে ফোটে না, একের পর এক তাদের বিকাশ ঘটে। ফলে পোকামাকড়ের খাদ্যের অভাব হয় না।

প্রো. ড্যোরিং আরো বলেন, ‘‘এখানে যেমন দেখা যাচ্ছে, নানা ধরনের পোকা এই ফুল ব্যবহার করতে পারে। ক্ষেতের ফাঁক দিয়ে ট্রাকটর চলে। ফলে সেখানকার মাটি সাধারণত বেশ শক্ত হয়। সে কারণে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর তেমন উপযোগিতা নেই। মাটির এমন বৈশিষ্ট্যের ফলে সেখান থেকে আয়ের অঙ্ক কম। আয়ের চিন্তা না থাকায় সেই জায়গা পোকামাকড় আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।’’

গবেষকরা আগাছা ধ্বংস করতে কোনো রকম রাসায়নিক ব্যবহার করেন না। ফলে পোকারা ক্ষেতের মধ্যেও খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে, যেমন বীজ, পরাগ, ক্যামোমিল ইত্যাদি।

খেতের ধারে ফুলের মেলা, কোনো কীটনাশক নয়, সারের পরিমাণও কম এবং ফসল পরিবর্তনের মতো পদক্ষেপ বেশ সফল হচ্ছে। প্রচলিত কৃষিক্ষেত্রের তুলনায় এখানে জীববৈচিত্র্য প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। সেইসঙ্গে পরাগবহনকারী পোকাদের মাত্রা ৫০ শতাংশ বেশি। তথ্যসূত্র: ডিডব্লিউ।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন