চাষ ছাড়া আলুর ফলন পাওয়া সম্ভব কথাটি শুনতেই তো অবাক লাগে। অবাক লাগলেও ক্ষেতে আলুর চাষ ছাড়াও আলুর ফলন পাওয়া সম্ভব। আসুন জেনে নেই চাষ ছাড়া আলুর ফলন পেতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে-
চাষ করার কারণ:
এই পদ্ধতিতে আলু চাষ করার ফলে খরচ অনেক কম হয়ে থাকে। এর কারণ কচুরিপানাকে মালচিং দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করে মাটির রস সবসময় সংরক্ষণ করা য়ায়। সেচ খরচ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়। অনেক কম রাসায়নিক সার দরকার হয়। জমিতে আগাছা কমে যায়। আলু বেশি সুস্বাদু হয়। আলুর আকারও অনেক বড় হয়।
জমি নির্বাচন:
এই পদ্ধতিতে আলু চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে বৃষ্টিপাত হলে পানি জমে না। সাধারণত উচ্চ ফলনশীল এবং স্থানীয় জাতের ধান কাটার পর জমি ফাঁকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আলু চাষের সুযোগ হয়। নদী বা পুকুর থেকে কচুরীপানা সংগ্রহ করতে হবে।
চাষ করার সময়:
এই পদ্ধতিতে আলু চাষ সাধারণত নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত উপযুক্ত সময়। তবে ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত বিরনা পদ্ধতিতে আলু চাষ করা যায়।
আলুর বীজ ব্যবস্থাপনা:
এই পদ্ধতিতে আলুর চাষে হিমাগারে সংরক্ষিত অনুমোদিত কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ইত্যাদি আলুর জাত নির্বাচন করা যেতে পারে। প্রতি শতকে ৬ থেকে ৮ কেজি বীজের দরকার হয়। ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ওজনের ছোট আলু বা বড় আলুর কমপক্ষে দুই চোখ বিশিষ্ট কাটা অংশই আলুর বীজের জন্য ভালো। কাটা অংশে ছাই লাগিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আলুর রোপণ পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিতে আলু রোপণের আগে বীজ অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধন করে নেওয়া ভালো। ২০ ইঞ্চি দূরে সারি করে ১০ ইঞ্চি দূরে প্রতিটি বীজ আঙুলের চাপ দিয়ে বসিয়ে দিতে হবে।
আলুর সার ব্যবস্থাপনা:
এই পদ্ধতিতে আলু চাষের ক্ষেত্রে বীজ রোপণের পূর্বে প্রতি শতকে ১.৩ কেজি ইউরিয়া এবং আধা কেজি টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে। আগের দিন পটাশ ও গোবর সার মিশিয়ে ছিঁটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের সময় বীজের গায়ে যেন কোনভাবেই রাসায়নিক সার না লাগে।
আচ্ছাদন:
এ পদ্ধতিতে আলু চাষে কচুরিপানা, খড়, নাড়া ইত্যাদি আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। নদী বা খাল থেকে কচুরীপানা তুলে রেখে দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে শুকালে সেটি আচ্ছাদন হিসেবে ভালো। খড় বা নাড়াকে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করলে ইঁদুরের আক্রমণ বাড়তে পারে। বীজ আলু লাগানোর পরপরই ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি পুরু করে আচ্ছাদন দিতে হবে। বীজ আলু সম্পূর্ণরূপে আচ্ছাদিত হতে হবে।
আলুর পরিচর্যা:
এই পদ্ধতিতে আলুর চাষে অনেক সময় পোকা চারাগাছ কেটে দেয় এবং ছিদ্র করে ফসলের ক্ষতি করে। এই পোকা দিনের বেলা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে। পোকার উপদ্রব খুব বেশি না হলে কাটা গাছের কাছাকাছি মাটি খুঁড়ে কীড়া সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। উপদ্রব বেশি হলে ক্লোরোপাইরিফস ২০ ইসি ৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া ও মাটি স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে। আলু লাগানোর ৩০-৪০ দিন পর এটা করা দরকার। বাড়িতে সংরক্ষিত আলুতে সুতলি পোকা লম্বা সুড়ঙ্গ করে। পরে এটি অন্য আলুর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
আলুর মড়ক:
এই পদ্ধতিতে আলুর চাষে আলুর মড়ক রোগ হলে প্রথমে পাতা, ডগা ও কাণ্ডে ছোট ছোট ভেজা দাগ পড়ে। এরপর এটি বড় হয়ে পুরো গাছে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে পুরো ক্ষেতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আক্রমণ হলে ক্ষেতে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় যেন ফসল পুড়ে গিয়েছে। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল অথবা ডাইথেন এম-৪৫, ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করে দিতে হবে।
আলুর সম্ভাব্য ফলন:
এই পদ্ধতিতে আলুর চাষে নিয়ম অনুযায়ী রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে চাষ করলে প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ টন আলু পাওয়া যায়। প্রচলিত পদ্ধতিতে আলুর চাষ করার চেয়ে বিনা চাষ পদ্ধতিতে আলুর চাষ করলে খরচ অনেক কম হয়ে থাকে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৪ফেব্রু২০২০