চৌবাচ্চায় পুঁটি মাছ চাষ করে অনেকেই সফল হচ্ছেন। আমাদের দেশে মাছ চাষ একটি লাভজনক পেশা। আমাদের দেশের পুকুরে প্রচুর পরিমাণে মাছ চাষ হয়ে থাকে। অনেকেই আবার শুরু করেছেন বাড়ির ভেতরে মাছ চাষ এতে সফলও হচ্ছেন অনেকেই। বাড়িতে চৌবাচ্চার মধ্যে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পুঁটি মাছ। পুঁটি অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং সবার কাছে প্রিয় ইচ্ছা করলেই বাড়িতে চৌবাচ্চায় পুঁটি মাছ চাষ করা যায় । আসুন জেনে নেই কিভাবে চৌবাচ্চায় পুঁটি মাছ চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে-
চৌবাচ্চায় পুঁটি মাছ চাষ করার পদ্ধতি:
পুঁটি মাছ চাষ করার মৌসুম: পুঁটি মাছ সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে বাড়িতে চৌবাচ্চায় পুঁটি চাষ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় নির্বাচন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এপ্রিল-মে মাসে পুঁটি মাছ ডিম ছাড়ে। তাই এ সময় পুঁটি মাছ চাষ করা সবথেকে ভাল।
পুঁটি মাছ চাষে চৌবাচ্চা বাছাই: পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য বাড়িতে মাঝারি অথবা বড় সাইজের চৌবাচ্চার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন চৌবাচ্চাটি মোটামুটি গভীর হয়।
পোনা ছাড়া ও যত্ন: চৌবাচ্চায় পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য প্রথমে পোনা সংগ্রহ করতে হবে।এ ক্ষেত্রে নিকটস্থ যেকোন নার্সারী হতে পোনা আহরন করতে পারেন। এছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবে খাল, বিল কিংবা যেকোন ধরণের জলাশয় থেকে পোনা আহরণ করা যেতে পারে। তবে পোনা ছাড়ার পর পোনাগুলোকে সঠিক নিয়মে যত্ন করতে হবে।
সঠিক উপায়ে পুঁটি মাছ চাষাবাদ পদ্ধতি: সাধারণত পুঁটিমাছ পুকুর কিংবা নদীতে বছরে দু´বার ডিম দেয় বলে এদের পোনা মজুদের প্রয়োজন হয়না। পুকুরে পুঁটি চাষ করার জন্য সঠিক নিয়ম অবলম্বন করতে হবে। চৌবাচ্চায় পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রথমে অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহন কৃত পোনা ব্যাগ সহ পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরিবহনকৃত ব্যাগের পানি ও চৌবাচ্চার পানির তাপমাত্রা একই মাত্রায় আনতে হবে। তারপর ব্যাগের মুখ খুলে চৌবাচ্চার পানি অল্প অল্প করে ব্যাগে দিতে হবে এবং ব্যাগের পানি অল্প অল্প করে চৌবাচ্চায় ফেলতে হবে। এরপর ৪০-৫০ মিনিট সময় ধরে পোনাকে চৌবাচ্চার পানির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
খাবার পরিমাণ ও খাবার প্রয়োগ: পুঁটি মাছ চাষে নিয়মিত উপযুক্ত খাবার দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবে পুঁটি মাছ প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে শেওলা খেয়ে থাকে। তাছাড়াও পুঁটি মাছ সবধরনের খাবার খেয়ে থাকে। তাই এদের চাষ করার ক্ষেত্রে আলাদা কোন খাবার এর প্রয়োজন হয় না। তবে মাঝে মাঝে চৌবাচ্চায় কিছু খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
রোগ বালাই ও তাঁর প্রতিকার: পুঁটি মাছ বেশ কিছু রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে সব সময় সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। মাছ কখনও রোগাক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
সার প্রয়গে নিয়ম: পুঁটি মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে পাত্র বা চৌবাচ্চায় সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে।মাঝেমধ্যে ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার দিতে হবে। এতে পানির গুণাগুণ বজায় থাকে এবং মাছের কোন ক্ষতি হয় না।
পুঁটি মাছের যত্ন: পুঁটি মাছ চাষ করতে বেশী যত্নের প্রয়োজন পড়ে না। তবে মাঝে মধ্যে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাছের কোন সমস্যা না হয়। যদি পানির কোন সমস্যা হয় পানি পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে পানিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করে পানির সঠিক মান ফিরিয়ে আনতে হবে।
পুঁটি মাছের খাদ্য গুণাগুণ: পুঁটি মাছের মধ্যে অনেক ধরনের খাদ্য গুনাগুন রয়েছে। এই মাছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ রয়েছে। যা আপনার শরীরের জন্য খুবই দরকারী। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন রয়েছে।
মাছ সংগ্রহ করার সময়: পুঁটি মাছ চৌবাচ্চায় চাষ করা হলে মাছ উপযুক্ত আকারে বড় হলেই এই মাছ সংগ্রহ করা যায়। বাড়িতে চৌবাচ্চায় সঠিক নিয়মে পুঁটি মাছ চাষ করলে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে পুঁটি মাছ পাওয়া যায়। উৎপাদিত পুঁটি মাছ পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৩জানু২০২০