ছাদ বাগানের গুরুত্ব আলোচনার পুর্বে আমাদের জেনে নেয়া দরকার আসলে ” ছাদ বাগান ” কি বা ” ছাদ
বাগান ” কাকে বলা হয় ।
ছাদ বাগান হলোঃ বসত-বাড়ির ছাদ, বানিজ্যিক ভবনের ছাদ বা কোন কল-কারখানার ছাদে মানব সৃষ্ট সবুজ
আচ্ছাদন বা টব, ড্রামে অথবা ট্রে, বক্স ইত্যাদিতে রোপনকৃত গাছ। অন্যভাবে বলা যায়, পাকা বাড়ির খালি
ছাদে অথবা ব্যালকনিতে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন উদ্যান ফসল যথা- ফুল, ফল, শাক-সবজীর বাগান গড়ে
তোলাকে বলা হয় ” ছাদ বাগান ” ইংরেজীতে যাকে বলে ” রুফ গার্ডেন ”।
আমাদের দেশে জনসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে । ুস্বাধীনতা উত্তর দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৭.৫
কোটি। বর্তমান সময়ে তা এসে দাড়িয়েছে ১৬.০০ কোটিতে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এর প্রভাব
পড়েছে সকল স্তরে । এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ১৯৫০ সালে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪ লক্ষ ১৭
হাজার। বর্তমানে তা এসে দাড়িয়েছে প্রায় ২.০০ কোটিতে । জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অবাধে কাটা হচ্ছে গাছ-
পালা, স্থাপিত হচ্ছে নতুন নতুন বাড়ি-ঘর, কল-কারখানা, বিনষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি, উজার হচ্ছে বন-জঙ্গল ।
ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা, উত্তপ্ত হয়ে উঠছে প্রকৃতি। একটু নির্মল বাতাস গ্রহন করার মত জায়গা খুঁজে
পাওয়াও দুস্কর হয়ে পড়েছে । বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে ঢাকা শহর। বাতাসে শুধু শিসা আর শিসা ।
সেইসাথে রয়েছে অন্যান্য ভারী পদার্থ, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর । তাই ঢাকাকে বাসযোগ্য শহর
হিসেবে ধরে রাখতে হলে ছাদ বাগান তৈরীর কোন বিকল্প নেই।
বিশ্বের অনেক দেশেই নগরীর তাপমাত্রা জন্য কৃত্রিম বাগান স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । জাপানের
টোকিও’র মেট্রোপলিটন সরকার নতুন ছাদের ন্যূনতম ২০ শতাংশ স্থানে বাগান স্থাপন বাধ্যতামূলক করে
২০০১ সালে একটি আইন পাশ করেছে । ফলশ্রুতিতে টোকিও’র গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট হ্রাস
পেয়েছে । অন্যদিকে সিংগাপুরে রাস্তার ফুটপাতগুলো সবুজ ঘাসে আবৃত করা হচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের
মতে, নগরীর পরিবেশগত অনেক সমস্যা ছাদ বাগান স্থাপন কার্যক্রমের আওতায় এনে সমাধান করা সম্ভব ।
ছাদ বাগানের উল্লেখযোগ্য গুরুত্বগুলো নিন্মে পেশ করা হলোঃ-
- অবকাঠামো তৈরীর ফলে যে পরিমাণ চাষের জমি নষ্ট হয়, ছাদ বাগান স্থাপনের মাধ্যমে তার কিছু অংশ পুষিয়ে নেয়া যায় ।
- তাজা শাক-সব্্জী ও ফল, ফুল পাওয়া যায় ।
- পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা যায় ।
- কেমিক্যাল মুক্ত ফল, সব্্জী পাওয়া যায় ।
- বাড়তি আয় ও অবসর সময় কাটানো যায় ।
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় ।
- পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে অন্যদেরও পুষ্টির যোগান দেয়া যায় ।
- জীব বৈচিত্র ও বায়ো-ডাইভারসিটি সংরক্ষণে সহায়তা করে ।
- গ্রীণ হাউস প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।
- বাড়ির পরিবেশ সুশীতল রেখে প্রশান্তি দান করে ।
- ছাদের সবুজ চত্ত্বর ও বাগান বিনোদন দিতে পারে ।
- ভালবাসা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা দান করে ।
- শেষ ভরসা হিসেবে কাজ করে ।
সুন্দর, পরিকল্পিত একটি ছাদ বাগান স্থাপন করে সহজেই আমরা ক্ষতিকর কেমিক্যালমুক্ত ফল, সবজী খেয়ে
পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারি । কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বাড়তি আয় করতে পারি । একই সাথে
সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারি ।
# আবদুল কাদের, হর্টিকালচার উইং, খামারবাড়ি, ঢাকা ।