ফুলকপি চাষ

964

cauliflower

ফুলকপি চাষে জলবায়ু তথা তাপমাত্রার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ১৭ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস সবচেয়ে উপযোগী । বয়স্ক গাছ অপেক্ষা চারার তাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা একটু বেশি । গাছের দৈহিক বৃদ্ধি থেকে বীজ ফুল আসা পর্যন্ত তাপমাত্রার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।

মাটির মান:
মাটির জৈব পদার্থের প্রাধান্য ও পানি সরানোর সুবিধা থাকা একান্ত দরকার। তবে কিছু পরিমাণ অম্লীয় মাটি, পিএইচ ৬.৫ থেকে ৭.৫ থাকা একান্ত দরকার । মাটির আঁশ প্রক্রিয়া ফুলকপির জন্য ভালো । চাষিদের খেয়াল রাখতে হবে, অধিক অম্লীয় মাটিতে থাকলে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব ও ক্ষার থাকলে বোরনের অভাব দেখা দিতে পারে । ফুলকপি চাষের জন্য আদর্শ মাটি হচ্ছে দোঁআশ । সাধারণ মাটিতে জৈব পদার্থ ব্যবহার করে বেলে দোঁআশ ও পলি দোঁআশ করে নিতে পারেন ফুলকপি চাষের জন্য । তবে একটি কথা সব সময় খেয়াল রাখা দরকার, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনে নিন মূল তথ্য ।

উৎপাদন:
শীতকালীন ফুলকপি চাষের বীজ তোলার আদর্শ সময় হচ্ছে আগস্টের প্রথম থেকে নভেম্বরের শেষ । বর্ষাকালীন, মানে আগাম ফুলকপি চাষ শেষ হওয়ার আগে চারা উৎপাদন করতে হবে । বীজ বপন করার তিন-চারদিনের মধ্যে চারা অঙ্কুরিত হয় । প্রায় এক সপ্তাহ পর দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তরিত করে ৪-৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব বজায় রেখে রোপণ করতে হবে । এ চারা একমাস বয়স হলে নির্দিষ্ট স্থানে রোপণ করার উপযুক্ত হয়। চারা রোপণের দূরত্ব ৬০ী৪০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে ।

জমি তৈরি:
যে জমিতে ফুলকপি উৎপাদন হবে, সে জমি ভালো করে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে । জমি বানানোর সময় আয়তন অনুযায়ী গোবর সার, কম্পোস্ট, খৈল ও ছাই ইত্যাদি সারের অর্ধেক পরিমাণ জমি কর্ষণের সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে ।

সার প্রয়োগ:
গোবর সার চারা রোপণের জন্য তৈরি গর্তে (২৫ী২৫) সেন্টিমিটার প্রয়োগ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে । ইউরিয়া ও মিউরেট এবং পটাশ সারের মিশ্রণ চারা রোপণের পরে উপরি প্রয়োগ করতে হবে ‘টপ ড্রেসিং’ পদ্ধতিতে ।

সার ব্যবহার প্রতি হেক্টরে:
সুষম কম্পোস্ট গুঁড়া সার ৪০০ থেকে ৬০০ কেজি অথবা গোবর ৪ থেকে ৬ টন, ইউরিয়া ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি, টিএসপি ১৫০ থেকে ২০০ কেজি, এমপি ১৫০ থেকে ২৫০ কেজি, জিপসাম ৬০ থেকে ৮০ কেজি, ডলোচুন ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি, বোরিক এসিড ৮ থেকে ১০ কেজি, এনোনিয়াস মলিবডেট ৫০০ থেকে ৮০০ কেজি, দস্তা সার (৩৬ শতাংশ)Ñ ৪ থেকে ৭ কেজি ।

চারা রোপণ:
৬ থেকে ৭টি পাতা থাকে এমন চারা রোপণ করতে হয় । আগাম ফসলের জন্য ৬০ সেন্টিমিটার পরপর সারিতে ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে মধ্য ফসলের জন্য । চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে বিকাল ।

সেচ প্রদান ও পরিচর্যা:
চারা রোপণের পর গোড়ায় ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দেয়া দরকার । পরদিন সকালে কলাগাছের খোল বা কচুরিপানা প্রভৃতি দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে । এ ছায়া বিকালে সরিয়ে ফেলতে হবে, যাতে চারায় রাতে শিশির পড়ার সুযোগ পায় । তিন থেকে চার দিন এ ব্যবস্থায় চারায় সেচ দিতে হয় সকাল-বিকাল। মাটির শক্তি বাড়লে গাছের সারির মধ্যবর্তী স্থানের গাছের গোড়ার মাটি হালকা ভেলি করে দিতে হয়। চারা রোপণের দুই মাসের মধ্যে গাছে ফুল দেখা যায় এবং এর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফুলকপি খাওয়ার উপযুক্ত হয় ।

পোকা দমন:
ফুলকপির বিভিন্ন পোকার মধ্যে জাবপোকা অন্যতম । এ পোকা পাতা ও ফুলের রস শোষণ করে। এ পোকা দমন করতে এফিডান সেভিন ৫ শতাংশ, সেফস বা নেক্সিয়ন ০.৫ শতাংশ ছিটানো যায় ।

রোগ দমন:
ফুলকপি রোগের মধ্যে ঢলে পড়া এবং মূলের গিট রোগ উল্লেখযোগ্য। এর আক্রমণে রোদের সময় গাছ ঢলে পড়ে । শিকড় ফুলে স্থানে স্থানে মোটা হয়ে যায় । প্রতি ৫০ গ্যালন পানির সঙ্গে ২৩০ গ্রাম পরিমাণে ক্যালোমেল মিশিয়ে গাছে ছিটানো দরকার । মূল গিট রোগ এক প্রকার নেমাটোড দ্বারা সৃষ্টি । এতে মূলে গিট দেখা দেয়। এর আক্রমণে ইমিলিন ড্রাই ব্রোমাইড দ্বারা মাঠে ফিউমিগেশন করা প্রয়োজন । মাটিতে চুন প্রয়োগেও উপকার পাওয়া যায় । ‘বকুল হাসান খান’