জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ গুড়ের হাট

115

জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ গুড়ের হাট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি হাটে গুড় কিনতে শত শত ক্রেতা আসছেন। উৎপাদন কম হওয়ায় অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখর গুড়ের হাট। সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার এখানে খেজুর গুড়ের হাট বসে। এবার খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি হলেও সরবরাহ কম। কৃষকরা খেজুর গাছ কেটে ফেলছেন। আবার অনেক খেজুর গাছের বয়স হয়ে যাওয়া তা থেকে রস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গুড় উৎপাদন কম হচ্ছে।

হাট সূত্র জানায়, হাটে প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ২০০-২৫০ টাকা করে। প্রতি সপ্তাহে ২০-৩০ লাখ টাকার গুড় বেচাকেনা হয়। প্রতি বছর এ হাট থেকে বেচাকেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ২০-২৫ কোটি টাকা। এ হাটের গুড় দেশের জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, পাবনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, পঞ্চগড়, সিলেট, খুলনা, রংপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গুড় কিনতে আসেন।

জিল্লুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, গুড়ের দাম বেড়েছে। এখন প্রতি ভাঁড় (গুড় রাখার পাত্র) গুড় ২৪০০-২৬০০ টাকা। তবে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় গুড়ে ভেজাল বন্ধ হয়েছে। এ হাটের ঝোলা গুড়-নলেন পাটালি সারা দেশে বিখ্যাত।

পাবনা থেকে আসা শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এবার গুড়ের দাম বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। তবে গুড়ে ভেজাল নেই। এছাড়া এ হাটে ব্যাপারীরা বেশ নিরাপত্তা পায়। কিন্তু ইচ্ছামতো গুড় কিনতে পারছি না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলা সদরে ৯৮ হাজার ৫০০টি খেজুর গাছ রয়েছে। আলমডাঙ্গায় ৪৫ হাজার ৫১০টি, দামুড়হুদায় নয় হাজার ২০০টি, জীবননগরে ৩৭ হাজার ৪৫০টি গাছ থেকে রস নামানো হয়। এবার জেলায় গুড়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।

স্থানীয় গুড় ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কুমার অধিকারী বলেন, আমাদের গুড়টা সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পাবনা ও ঢাকাসহ সারাদেশে যায়। বাপ-দাদার মুখে শুনে আসছি এটা ৩০০ বছরের পুরোনো দেশের সর্ববৃহৎ হাট।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের গুড় ব্যবসায়ী বাবুল বলেন, এ হাটে খাঁটি গুড় পাওয়া যায়। এখানকার গুড়ে কোনো ভেজাল নেই। বহু জায়গা থেকে ব্যাপারী আসে এখানে।

সামসুল মিয়া নামের একজন চাষি বলেন, গত বছর ২৫টি গাছ প্রস্তুত ছিল। এবার সে সংখ্যা ১২টিতে নেমেছে। গাছ থেকে যেটুকু রস পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে গুড় তৈরি করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের গুড় প্রস্তুতকারক চাষি আসাদুল বলেন, গাছ কাটার হিসেবে তুলনামূলক যে খাটনি সেটি দিয়ে মজুরি হয় না। ২৫০-৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করলে আমরা মজুরিটা পেতাম। কিন্তু তাতো আমরা পাইনে।

হাটে পাইকারি গুড় কিনতে আসা প্রবির সাহা বলেন, আমি এসেছি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে। চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ হাটের গুড়ের মান খুব ভালো। ঢাকায় এসব গুড়ের অনেক চাহিদা।

হাট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নিলুয়ার বলেন, সপ্তাহে দুদিন এ হাট বসে। বাইরে থেকে যে ব্যাপারীরা আসেন আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। এ হাটের সুনাম সারাদেশে। এখানে এক-দেড় কোটি টাকার গুড় কেনাবেচা হয়।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, সপ্তাহে দু-দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ হাটে গুড় বেচাকেনা হয়। তবে এবার জানা গেছে হাটে গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু সরবরাহ কম। জেলার কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা গুড়ের চাহিদা পূরণে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।