জয়পুরহাটে পতিত জমিতে শজনে চাষ

112

পুষ্টিগুণে ভরপুর ও আঁশজাতীয় সবজি শজনের ভারে হেলে পড়েছে শজনের গাছগুলো। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বাড়ির পাশের অনাবাদি ও পতিত জমিতে শজনে চাষ করে পুষ্টির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন জেলার কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার শজনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন এলাকার কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, জয়পুরহাট জেলায় এবার ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শজনে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এতে শজনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। সদর উপজেলার মোহাম্মাদাবাদ, বম্বু, ভাদসা, দোগাছী, জামালপুর ও ধলাহার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির পাশের অনাবাদি ও পতিত জমিতে বারোমাসি শজনের চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া কালাই উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অকৃষি বা পতিত জমিতে হাইব্রিড, বারোমাসি ও দেশি জাতের শজনের চাষ হচ্ছে। বাসাবাড়ির আশপাশে, পুকুর পাড়ে, ছাদে ও হাসপাতাল, স্কুল, কলেজের মাঠে এবং রাস্তার দু’পাশে অকৃষি বা পতিত জমিতে পুষ্টিগুণে ভরপুর ও আঁশজাতীয় সবজি শজনের সারি সারি গাছগুলো এখন শজনের ভারে হেলে পড়ছে এলাকায়। প্রতি বছরের মতো জেলায় শজনে চাষ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এখানকার শজনে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে বলে জানান স্থানীয় কৃষক সোহরাব হোসেন। এছাড়া শজনে বিক্রি করে অনেকেই আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছেন। বাজারে এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি শজনে বিক্রি হচ্ছে। শজনে চাষ ইতোমধ্যে অর্থকরী ফসল হিসেবে সবার কাছে বিবেচিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার শজনে বাম্পার ফলন হবে বলে আশ করছেন এলাকার শজনেচাষিরা।

সদর উপজেলার বুলপাড়া গ্রামের শজনেচাষি নজরুল ইসলাম ও আবু তাহের বলেন, বাড়ির সামনে রাস্তার দু’ধারে ১০টি শজনের গাছ লাগানো হয়েছিল। গত বছর ওইসব শজনের গাছ থেকে প্রায় ৮ মণ শজনে বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। আশা করছি, এবারও শজনের বাম্পার ফলন পাব। বাজারে এবার প্রথম থেকেই ২০০ টাকা কেজি শজনে বিক্রি হচ্ছে।

জয়পুরহাটের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান মানিক বলেন, শজনে পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি। শজনের মধ্যে ভিটামিন-এ ও সি আছে। এটি মানবদেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। শজনে উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের অনেক উপকারী। তাছাড়া অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ শজনের পাতা এখন শাক হিসেবেও খাওয়া হয়ে থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন বলেন, শজনে একটি পরিবেশবান্ধব ও অর্থকরী আঁশজাতীয় সবজি। এটি বাড়ির পাশের অনাবাদি ও পতিত জমিতেও চাষ করা যায়। শজনে চাষে পানির খরচ কম লাগে। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়। শজনে গাছের তেমন কোনো রোগবালাই নেই বললেই চলে এবং অন্যান্য খরচও নেই। একটু পরিচর্যা করলেই অনেক ভালো ফলন পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।