সাতক্ষীরার শুঁটকি যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে

38

সাতক্ষীরায় উৎপাদিত মিঠাপানির শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানির পাশাপাশি যাচ্ছে ভারতে। এই জেলায় মিঠাপানির শুঁটকি মাছ উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি মাছ দেশের উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রামে সরবরাহের পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এসব শুঁটকি মাছের মধ্যে রয়েছে সিলভারকার্প, বাটা, তেলাপিয়া, পুঁটি ও মৃগেল অন্যতম।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছেন, কার্প জাতীয় মাছের শুঁটকি উৎপাদনে অপার সম্ভাবনা সাতক্ষীরা। এখানে বছরে বিপুল পরিমাণ মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয়। যা থেকে শুঁটকি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী  সাধন চন্দ্র জানান, গত ৪-৫ বছর শুঁটকি মাছ উৎপাদন করেন। এসব শুঁটকি মাছের মধ্যে সিলভারকার্প, বাটা, তেলাপিয়া, পুটি ও মৃগেল। প্রতি মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার কেজি শুঁটকি মাছ উৎপাদন করেন তিনি। তার উৎপাদিত এসব শুঁটকি মাছ উত্তবঙ্গের সৈয়দপুর, চট্টগ্রামে সরবরাহ করেন।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরার মিঠাপানির মাছের শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে উত্তরবঙ্গ এবং চট্টগ্রামে। বর্তমানে প্রতি মণ শুঁটকি মাছ পাইকারি বিক্রি করছেন ১৮ থেকে ২০ হাজার  টাকা। শুঁটকি উৎপাদনে শুঁটকি খুবই সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরা জেলা। এই জেলায় প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন প্রজাতির মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয়। এসব মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও শুঁটকি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশও রপ্তানি করা সম্ভব।

শহরতলির বিনেরপোতার অপর এক শুঁটকি ব্যবসায়ী প্রশান্ত কুমার জানান, স্থানীয়ভাবে কম মূল্যের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করেন। পরবর্তীতে এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন এলাকার পোলট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন। এছাড়া সিলভারকার্প, মৃগেলসহ অন্যান্য কার্পজাতীয় মাছ শুঁটকি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন।

দেশের উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বৃহৎ শুঁটকি আড়ত ও পাইকারি মোকাম সৈয়দপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. সাহাবুদ্দিন জানান, প্রতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শুঁটকি মাছ সংগ্রহ করেন। এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি ভারতে রপ্তানি করেন বলে জানান। এর মধ্যে সিলভার কার্প শুঁটকি দেশের বাজারে সরবরাহ করা হয় এবং পুঁটি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রপ্তানি করা হয়। ভারতে পুঁটি মাছের শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা বলে জানান তিনি।

সাহাবুদ্দিন বলেন, উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলায় যে পরিমাণ মিটাপানির মাছ উৎপাদন তার একটি অংশ শুঁটকি তৈরি দেশের বিভিন্ন সরবরাহ করতে চাষি ব্যাপক লাভবান হবে বলে জানন তিনি। সাতক্ষীরা জেলা শুঁটকি উৎপাদনে খুবই সম্ভাবনাময় বলেও জানান তিনি।

জেলা মৎস্য অফিসার মো. আনিছুর রহমান বলেন, মিঠাপানির শুঁটকি মাছ উৎপাদনে খুবই সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরা জেলা। বছরে প্রায় দুই লাখ টন সাদা মাছ উৎপাদন হয় উপকূলীয় এ সাতক্ষীর জেলা থেকে। যা স্থানীয় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। তবে সাতক্ষীরায় শুঁটকি উৎপাদনেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা।

তিনি আরও বলেন, বছরে একটি সময় সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন মাছের ঘেরে ধানচাষ হয়। ধান চাষের জন্য অফ সিজনে কম মূল্যে মাছ বিক্রি করেন চাষিরা। এ সময় ওই মাছ সংগ্রহ করে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে বেশি লাভবান হতে পারে চাষি ও ব্যবসায়ী। গত ৩-৪ বছর বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ব্যবসায়ী মিঠাপানির মাছ শুঁটকি তৈরি করছেন। তবে সরকারিভাবে এর কোনো তথ্য বা পরিসংখ্যান নেই তার জেলা মৎস্য বিভাগে। শুঁটকি ব্যবসায় বড় চাষি বা ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসলে এই জেলায় বছরে বিপুল পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব, যা দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।