মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকে: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ চিনিকল এলাকায় এবার বোরো ধান চাষ মৌসুমে টানা ৪/৫ মাস অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে চলতি আখ রোপন মৌসুমে মোচিকের কেন্দ্রিয় সার গুদামসহ এর আওতায় ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রগুলোর সার গুদামে টিএসপি সার না থাকায় নতুন আখচাষ মারাত্মক ব্যাহত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মিল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে টাকার অভাবে টিএসপি সার সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি ২০১৮-২০১৯ আখ রোপন মৌসুমে সদর দপ্তর থেকে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের লক্ষমাত্রা দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ৫শ একর জমিতে।
ধান, পাট, কলাসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসল চাষে এবার এই অঞ্চলের চাষিরা অনাবৃষ্টির কারণে দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা নতুন আখ রোপনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
চাষিরা জমি চাষ করে আখ রোপনের জন্য প্রস্তুতি নিলেও মিল কর্তৃপক্ষ ও ইক্ষু কেন্দ্রের সিআইসি গণ আখ উন্নয়ন কর্মীদের দেয়া ভাউচারে টিএসপি ও এমওপি সার সরবরাহ দিতে না পারায় চাষিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। কবে নাগাদ মিল কর্তৃপক্ষ আখের জমির জন্য টিএসপি সার সরবরাহ দিতে পারবে তাও বলছে না।
মোচিকের অধিন ঘিঘাটি, ত্রিলোচনপুর, সুন্দরপুর, খালিশপুর, সাবদালপুর সহ বড় বড় কেন্দ্রের চাষিরা জানান, অতিদ্রুত টিএসপি সার সরবরাহ করলে আসন্ন রোপন মৌসুমে ধান, কলা ও পাটের খালী জমিতে ব্যাপক হারে নতুন করে আখ চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে।
আখ উন্নয়ন কর্মীরা জানায়, টিএসপি সার সরবরাহ করলে এবার মোচিক অঞ্চলে ৫/৬ হাজার একর জমিতে আখ চাষ হতে পারে। সেই সাথে মুড়ি আখ পাওয়া যাবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার একর। সব মিলিয়ে আগামী মৌসুমে এই মিলটিতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার একর মাড়াই যোগ্য দন্ডায়মান আখ পাবার সম্ভবনা রয়েছে।
আসন্ন ২০১৭-২০১৮ মাড়াই মৌসুমে এই মিলে ৫ হাজার ৭শ একর জমিতে মাড়াই যোগ্য আখ রয়েছে। মিল গেট এলাকার সুন্দরপুর গ্রামের আখ চাষি আব্দুল আজিজ জানায়, এবার তার দেড় একর আখ রয়েছে। ২৫ কাঠা জমিতে পাট চাষ এবং ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করে অনাবৃষ্টির কারণে সে অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। যে কারণে এই চাষি ধান ও পাট চাষের জমিতে আখ চাষে আগ্রহ দেখালেও সার সরবরাহ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
একই ধরনের অভিযোগ ব্যক্ত করেছেন ঘিঘাটি কেন্দ্রের ১৬ নং ইউনিটের চাঁদপাড়া গ্রামের তাহাজ্জেল হোসেন, আজম হোসেন, শাহপুর গ্রামের বড় চাষি খলিলুর রহমান, ১৭ নং ইউনিটের বড় চাষি হুমায়ন, মেহেদি হাসান, বাবরা গ্রামের আব্দুল মান্নানসহ অসংখ্যা চাষি। তারা জানায়, বোরো ধান মৌসুমে দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি আর টানা খরার কারণে ধানে বার বার সেচ দিয়েও আশানুরূপ ফলন পায়নি। অর্ধেক ধান চিটে হয়ে গেছে। সংগত কারণে এই মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষিরা আখ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করলেও মিল কর্তৃপক্ষ ভরা আখ উৎপাদন মৌসুমে টিএসপি সার সরবরাহ দিতে না পারায় তাদের মন ভেঙে যাচ্ছে।
মোচিক এলাকার চাষিদের আশাবাদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় সার কৃষকের হাতে পৌঁছে দিতে পারে তাহলে এই মিলে এবার ৫/৬ হাজার একর নতুন আখ রোপনের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। মোচিক আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মন্টু চিনিকল সংস্থার চেয়ারম্যান, পরিচালক (ইক্ষু গবেষনা ও উৎপাদন) সহ মিলের এমডি ও কৃষি জিএম এর আশু সুদৃষ্টি করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টিএসপিসহ অন্যান্য সার সরবরাহের তাগিদ দিয়েছেন। অন্যথায় জমির জো চলে গেলে এ মৌসুমে আখ চাষের উজ্জল সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন