ঝিনাইদহে ধানের কম দামে হতাশ কৃষকরা

259

রোবরি-ধান
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ থেকে: ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলাসহ শৈলকুপা উপজেলায় ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পরেছে। বাজারে ইতোমধ্যে নতুন ধান উঠতে শুরু করলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে।

চলতি আমন মৌসুমে শৈলকুপা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ধান আবাদ হয়েছে। দিগন্ত মাঠজোড়া সবুজের সমারোহ সোনা রঙে দুলছে তবুও হাসি নেই কৃষকের মুখে। কৃষাণীর উঠোনে আগাম প্রস্তুতির ব্যস্ততা নেই, ক্রমেই ফিকে হয়ে উঠছে ঋণগ্রস্ত কৃষি পরিবারগুলো। চিন্তারেখায় হিসেবের খাতা নীল বেদনায় কাতরাচ্ছে ধানের বাজার দেখে। একমণ ভালো ধানের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬শ টাকা, যার বিপরীতে খরচ হাজার টাকার ওপর।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার হাটফাজিলপুর, আবাইপুর, মীনগ্রাম, বগুরা, কামান্না, শিতালী, ধলহরাচন্দ্র, ধাওড়া, বিজুলিয়া, মনোহরপুর, সাতগাছি, ব্রহ্মপুর, মৌকুড়ি পুরাতন বাখরবা, ভাটবাড়িয়া, বারইপাড়া, ব্রাহিমপুর আউশিয়া, খালকুলাসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে আমন ধানের মাঠ ভরে উঠেছে। ইতোমধ্যে ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষক।

তুলনামূলক প্রতি বছরের চেয়ে এ বছর রোগ বালাই কম হলেও প্রথম থেকে প্রকৃতি বৃষ্টি বিমুখ হওয়ায় চিন্তিত ছিল কৃষকেরা, সম্প্রতি আশানুরূপ বৃষ্টি পেয়ে ভরে উঠেছে আমনের মাঠ।

ফাজিলপুর গ্রামের কৃষক আবু সাইদ জানান, বিল ও নিচু মাঠ এলাকার ধান বেশি ভালো হয়েছে রোগের প্রাদুর্ভাবও কম তবে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তার বিপরিতে প্রতিটি কৃষকই ঋণের ভারে জর্জরিত থাকবে।

তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে এক মণ ধানের দাম ৬শ টাকা নতুন আমন বাজারও যদি এরকম থাকে তাহলে ঝুঁকিতে পড়বে কৃষিজীবী পরিবার।

ব্রাহিমপুর গ্রামের চাষি মিলন হোসেন বলেন, এ বছর বীজতলা থেকে শুরু করে সমস্ত চাষাবাদ, সার-সেচ, কীটনাশক থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত সাধারণত খরচ হবে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা সে তুলনা বর্তমান ধানের বাজার প্রায় অর্ধেক। সরকার ধানের বাজার মূল্য না বাড়ালে কৃষকদের মাথায় হাত উঠবে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত কৃষি পরিবারগুলো চরম অর্থসঙ্কটে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। অনেকই এখনো সার কীটনাশকের দোকানে বকেয়া রেখেছে যারা ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবে তাদের মূলধনই টিকবে না বরং নানাভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে যাবে।

শৈলকুপা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জানান, কোন কোন ফসলের ভরা মৌসুমে বাজার ওঠানামা করে তবে এ বছর ধানের বাজার প্রায় একই রকম। কৃষি ও কৃষকের বাজার ব্যবস্থাপনায় কৃষিবান্ধব হিসেবে সরকার নজর দিলে প্রতিমণ ধানের বাজার কমপক্ষে ১ হাজার টাকা হওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।

শৈলকুপা বাজারের একাধিক সার ব্যবসায়ী জানান, বহু কৃষকের কাছে থেকে তাদের বকেয়া টাকা পড়ে রয়েছে যা ধান বিক্রি করে পরিশোধের কথা রয়েছে কিন্তু ধানের বর্তমান যে বাজার সে হিসেবে কৃষকেরা ঋণগ্রস্তই থেকে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন।

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার কুন্ডু বলেন, ধান কাটা শুরু হলে ভরা মৌসুমে ধানের বাজার সরকারের সুদৃষ্টিতে একটু পরিবর্তন হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তবে বর্তমান পর্যায়ে ধান চাষিরা লোকসানের ভাগেই অবস্থান করছেন বলে জানান।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন