ডিম একটি আর্দশ খাদ্য সবার জন্য। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ডিম নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাসে মিলবে অনেক উপকার। বিজ্ঞানীগণ এত দিন ডিম গ্রহণের বিপক্ষে মত দিলেও এখন এর উপকারী দিক বিবেচনায় নিয়ে নিয়মিত ডিম খাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
ডিমের পুষ্টি উপাদান:
ডিম পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ একটি খাবার। এতে শর্করা, প্রোটিন, স্নেহ, বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন রয়েছে। এসকল পুষ্টির কারনে ডিমের উপকারিতা অনেক। আমাদের দেশে সাধারনত মুরগীর ডিম, হাঁসের ডিম, কোয়েল পাখির ডিম মানুষ বেশি পছন্দ করে থাকে।
ডিমে ভালো কোলেস্টেরল এর পরিমান বেশি যার কারনে এখন ডাক্তাররা প্রতিদিন একটি ডিম খেতে বলেন।
ডিমে যেসকল পুষ্টি উপাদান থাকে
সম্পূর্ণ সেদ্ধ আস্ত একটি ডিমে আছে
শর্করা ১.১২ গ্রাম,
স্নেহ পদার্থ ১০.৬ গ্রাম,
প্রোটিন ১২.৬ গ্রাম,
কোলেস্টেরল ৫ গ্রাম, যার মধ্যে ভাল কোলেস্টেরলের মাএা ৩.৫ গ্রাম। বাকি অংশটুকু মন্দ কোলেস্টেরল এলডিএল। ভাল কোলেস্টেরলের অংশ বেশি।
তাছাড়া রয়েছে লৌহ,
ফসফরাস,
ক্যালসিয়াম,
খনিজ পদার্থ,
ভিটামিন-এ,
থায়ামিন এবং
ভিটামিন ডি।
পানির পরিমাণ ৭৫ গ্রাম।
দেশী মুরগীর ডিম বনাম ব্রয়লার মুরগীর ডিম
তবে ব্রয়লার মুরগী থেকে দেশী হাঁস-মুরগী ডিমে ভিটামিন এ ও ডি পরিমাণ বেশি থাকে।তাই ডিমের কুসুমের রং গাঢ় কমলা হয়। কারণ হিসেবে বলা যায়, দেশী হাঁস-মুরগী রৌদ্রের আলোতে বড় হয়। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগী আধুনিক পরিবেশে খামারে লালন-পালন করা হয় বলে সূর্যের আলোর স্বল্পতা রয়ে যায়।ব্রয়লার মুরগীর তাই ডিমের কুসুমের রং হালকা কমলা।তবে এই ডিমে ভিটামিন এ ও ডি পর্যাপ্ত পরিমাণ পাওয়া যায়।যা থেকে দেহের সুষম খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
আমেরিকার একটি হার্ট সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে যে, একজন মানুষের প্রতিদিন ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টরল প্রয়োজন। একটি বড় আকৃতির ডিমে ১৮৬ এবং ছোট আকৃতির ডিমে ১৪১ গ্রাম কোলেস্টেরল রয়েছ। তাছাড়া আমাদের দেহে ধরনের ২০টি অ্যামাইনো এসিড প্রয়োজন হয়। যার মধ্যে দেহে ১১টি সক্রিয় ভাবে তৈরি হয়।বাকি ৯টি অম্যাইনো এসিডে পাওয়ার সহজ সমাধান একটি ডিম।
ডিমের মধ্যে আরো রয়েছে কোলিন।যা মস্তিষ্কের প্রচুর উন্নতি ঘটায়। বিশেষত গভার্স্থায় শিশুর মস্তিষ্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়াও ডিমে লুটেইন ও জিয়াজাথিন নামে দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছ। যা চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ডিম একটি সুষম খাদ্য। জাতিসংঘের কৃষি এবং খাদ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর গড়ে কমপক্ষে ১০৪টি ডিম খাওয়া উচিত। তাই বলা যায়,আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্যের সঠিক ব্যালেন্স রাখতে একটি ডিম রাখতেই পারেন।
ডিমের উপকারিতা
ডিমে রয়েছে ভিটামিন বি-১২ যা সহজে ক্লান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং শরীরকে এনার্জি প্রদান করবে দীর্ঘসময়। তাছাড়া ভিটামিন এ আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা এবং চোখকে ছানি পরা থেকে দূরে রাখবে সাথে বয়সকালের সমস্যা গুলো।আরও রয়েছে ভিটামিন ডি যা পেশী ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।
ডিম প্রোটিনের একটি ভালো উৎস যা মাংসপেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ৫০-১৭৫ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন।প্রতি একটি ডিম গ্রহণে ৬-৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।তাই বলা যায়,প্রতিদিন দুইটি ডিম খাওয়া যেতেই পারে।ব্রিটিশ ডায়েটক অ্যাসোসিয়েশনের ড.ফ্র্যাস্কি ফিলিপস্ বলেছেন, “ দিনে একটা-এমনকি দুটো ডিমও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো” ।
ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কলিন যা আমাদের মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে এবং যকৃত ও স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে রাখে।তাছাড়া ভালো ফ্যাট পলিআনস্যাচুরেটড এবং মনোআনস্যাচুরেটেড আছে যা স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে সরিয়ে তার স্থানে বসে এবং রক্তে থাকা কোলেস্টেরলের মাএা কমিয়ে ফেলে।এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কুসুমে রয়েছে ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যে সকল মহিলা প্রতিদিন ২টি করে ডিম খান,তাদের শরীরে রুটি খাওয়া মানুষের তুলনায় কম ফ্যাট পাওয়া গেছে।
ডিম খাওয়ার সুফল
ডিম খাওয়ার একটি বড় সুফল হচ্ছে ওজন কমানো যায়। দীর্ঘ সময় আপনার পেট ভরিয়ে রাখবে। ফলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণে প্রবণতা হ্রাস পায়। ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছ, মুরগীর ডিম ওজন কমাতে বিশেষ ভাবে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।এছাড়াও নখ ও চুলের যত্নে ডিম খাওয়ার কোন জুড়ি নেই। নখ ভেঙে যাওয়া এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ডিম অত্যাবশকীয় খাদ্য। ডিমে থাকা সালফার অনেকটা যাদুর মতো কাজ করে থাকে।
সুতরাং বলা যায়, সুষম খাদ্যের আধার ডিম নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়ার পাশাপাশি মিলবে অনেক উপকারিতা।