তরমুজে কী সেই অজানা রোগ

430

তরমুজ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে তরমুজ ক্ষেতে অজানা রোগ দেখা দিয়েছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগও রোগ নির্ণয় করতে না পেরে নমুনা সংগ্রহ করে গাজীপুরের জয়দেবপুর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ল্যাবে পাঠিয়েছে।

কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, চার-পাঁচদিন আগে কিছু ক্ষেতে হঠাৎই তরমুজ গাছ মরে যেতে শুরু করে। যেসব জমিতে এবারই প্রথম তরমুজ চাষ করা হয়েছে, সে ক্ষেত একাধিকবার চাষ করা হয়েছে, এমন ক্ষেতে মড়কের ধরন আলাদা। দেখা গেছে, উপজেলার মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নে এবারই প্রথম তরমুজ চাষ হয়েছে, সেখানে গাছের পাতাগুলো প্রথমে কুঁকড়ে যাচ্ছে। এরপর বিবর্ণ হয়ে একপর্যায়ে গাছ মরে যাচ্ছে। অন্যদিকে চরবাটা, চরজব্বার ও চরজুবলি ইউনিয়নে টানা কয়েক মৌসুম তরমুজের আবাদ হচ্ছে, এসব ক্ষেতের গাছগুলোয় প্রথমে গোড়ায় পচন ধরছে। এরপর ধীরে ধীরে ডগা থেকে কাণ্ড ও পাতা বিবর্ণ হয়ে নুয়ে পড়ে একপর্যায়ে মরে যাচ্ছে। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের পরামর্শে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও ফল পাচ্ছেন না কৃষকরা। ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে।

চরজুবলি ইউনিয়নের উত্তর চর কচ্ছপিয়া গ্রামের কৃষক দিদারুল আলমের তথ্যের ভিত্তিতে চরজুবলি ইউনিয়নের চরবাগগা, দক্ষিণ কচ্ছপিয়া, চরবাটা ইউনিয়নের পশ্চিম চরবাটা গ্রাম ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী মৌজা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার ক্ষেতের তরমুজ দু-তিন দফা বিক্রি হয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেতে মাত্র ফল এসেছে, ১০-১৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যাবে।

কৃষকরা জানান, এ বছরই প্রথম সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নের কিছু জমিতে মৌসুমের শুরুতে তরমুজ চাষ করা হয়েছিল। আগাম তরমুজে বেশ লাভও হচ্ছে। তবে পাতা কোঁকড়ানো রোগে তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। অন্যদিকে চরবাটা, চরজব্বার ও চরজুবলি ইউনিয়নের যেসব জমিতে কয়েক মৌসুম ধরে তরমুজ চাষ করা হচ্ছে সেগুলোতে গোড়া পচা রোগে ধরেছে। এ এলাকায় দেরিতে তরমুজ আবাদ করায় ফল এখনো বিক্রির উপযোগী হয়নি।

পিকেএসএফ এর অর্থায়নে পরিচালিত একটি এনজিওর কৃষি কর্মকর্তা শিবব্রত ভৌমিক বলেন, তিনি উপজেলার প্রায় সব এলাকা ঘুরে দেখেছেন। কোন রোগে তরমুজ গাছ মরছে, তা ল্যাব টেস্ট ছাড়া বলা মুশকিল। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নমুনা সংগ্রহ করে গাজীপুর পাঠিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হাসিব আবদুল্যাহ্ বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। রোগের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্টের জন্যও পাঠানো হয়েছে। দু-তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট আসবে। তখনই মূল কারণ জানা যাবে এবং কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দেয়া যাবে।

নোয়াখালীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জেলা সরেজমিন গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আমির ফয়সাল এ নতুন রোগের ব্যাপারে গতকাল বলেন, নমুনা পরীক্ষার জন্য তিনি বর্তমানে গাজীপুরে বারির ল্যাবে অবস্থান করছেন। তবে রোগটি বেশ জটিল বলেই মনে হচ্ছে তার। বীজ সংগ্রহের ব্যাপারে কৃষকদের আরেকটু সচেতন হওয়া এবং একই জমিতে বারবার একই ফসল আবাদ না করে শস্য আবর্তন পদ্ধতি অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত বর্ষায় সুবর্ণচরে বেশি সময় ধরে পানি জমে থাকায় রবি ফসল আবাদে বিলম্ব হয়ে গেছে। কিছু ফসল আবাদ কমেও গেছে। তবে দেরিতে হলেও চলতি মৌসুমে উপজেলার চরাঞ্চলে গত বছরের তুলনায় তরমুজ আবাদ হয়েছে বেশি। এ বছর ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে, যেখানে গত মৌসুমে ছিল তিন হাজার হেক্টর।

Rafid

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন