দিনাজপুরের পাবর্তীপুরে গবাদিপ্রাণি পালন করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বি

370

images

সেখ জিয়াউর রহমান, দিনাজপুর থেকে: ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দিনাজপুরের পাবর্তীপুর উপজেলার আবাদি জমি ও বনাঞ্চল বিনষ্ট করে বসতবাড়ি নির্মান করায় এ উপজেলায় কৃষিখাতে কর্মসংস্থানের সুয়োগ দিন দিন কমে আসছে। কিন্তু আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির প্রসার ঘটার সাথে সাথে পাবর্তীপুর উপজেলায় স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে গবাদিপ্রাণী ও হাঁস-মুরগি পালন ক্রমেই জনপ্রিয় হয়েউঠছে। এতে প্রাণী পালন আত্মকর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। উপজেলায় গড়ে উঠেছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে হাঁস-মুরগি ও গবাদি প্রাণির নতুন নতুন খামার। আর এসব খামারকে কেন্দ্র করে উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রাণিখাদ্য, প্রাণিচিকিৎসা, দুধ, ডিম ও মুরগির অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনেক বেকার যুবক প্রাণিচিকিৎসায় যুক্ত হয়ে স্বচছল জীবন যাপনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কৃষিনির্ভর পার্বতীপুর উপজেলায় বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে শতাধিক দুগ্ধ খামার, ২৪ টি ছাগলের খামার, ২৬ টি ভেড়ার খামার, ১২২ টি মুরগির খামার, ৪৮ টি হাঁসের খামার, ১ টি বড় আকৃতির কোয়েল খামার গড়ে উঠেছে। এছাড়া পারিবারিক পর্যায়ে দু’টি তিনটি গরু নিয়ে অসংখ্য ছোট খাটো দুগ্ধ খামার প্রায় প্রতিটি গ্রামের  প্রতি পরিবারে দেখা য়ায়। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে ডিম ও মাংস উৎপাদনকারী অসংখ্য হাঁস-মুরগি। ব্যবসায়ীদের হাতঘুরে এখান থেকে প্রতিদিন অসংখ্য গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, দুধ, ডিম ট্রাক ও কোচে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। গত বছর কোরবানীর ঈদে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৪৮ হাজার গরু, ছাগল, ভেড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মচারী খলিলুর রহমান বলেন, পাবর্তীপুরে কয়লা ও পাথরের খনি আছে শুধু তাই নয়; এখানে ডিমের খনিও আছে। তিনি জানান, উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়ায় রয়েছে পাথর খনির পাশে সিপি বাংলাদেশ নামে একটি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত প্রায় ৮০ হাজার ডিম প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ দেয়া হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো ইদ্রিস আলী বলেন, একসময় পাবর্তীপূরে একটি দেশী গাভী থেকে প্রতিদিন ২ লিটার দুধ পাওয়া যেত। কিন্তু দেশী গাভীকে কৃত্রিম প্রজননের  মাধ্যমে উন্নত জাতের গাভী সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে একেকটি গাভী থেকে দিনে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লিটার দুধ পাওয়া যাচ্ছে। দুধ, ডিমের দাম চড়া হওয়ায় হাঁস-মুরগি পালন লাভজনক পেশা হিসেবে পরিণত হয়েছে। উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের দাড়ারপাড় গ্রামের বিত্তহীন সাইফুল ইসলাম গত ৪ বছরধরে হাঁস পালন করে অনেক আর্থিক উন্নতি করেছেন। তিনি প্রতি বছর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা থেকে দেড় থেকে দুই হাজার ১ দিনের বয়সের হাঁসের বাচ্চা কিনে নিয়ে আসেন। উপজেলা প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে এসব হাঁস খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তিন মাসে খাবার উপযোগী হলে সেগুলো বিক্রি করে দেন।