নাটোর : জেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের ক্ষেত্র ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। ফলাফল হিসেবে দুধ, ডিম আর মাংসের উৎপাদন বাড়ছে। এসব খাদ্য উৎপাদনে নাটোর এখন উদ্বৃত্ত জেলা।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-২০০৯ সালে সমগ্র জেলায় নয় কোটি পিস ডিম এবং সাড়ে ছয় হাজার টন দুধ উৎপাদন হয়েছিল। ২০১১-২০১২ সালে জেলায় ডিমের উৎপাদন বেড়ে হয় ১০ কোটি ৯৮ লাখ পিস, দুধ আট হাজার ১০০ টন এবং মাংস ৪২ হাজার ৯৬০ টন। পরবর্তীতে বিগত ছয় বছরে ডিমের উৎপাদন বেড়ে ২০১৭-২০১৮ বছরে হয়েছে ২০ কোটি ৪৫ লাখ পিস এবং দুধ দুই লাখ ৪৭ হাজার টন ও মাংস এক লাখ ৪৬ হাজার টন।
বর্তমানে জেলার জনসংখ্যা ১৮ লাখ ২৬ হাজার ১৪০ জন। জনপ্রতি ১০৪টি হিসেবে বছরে মোট ডিমের চাহিদা ১৯ কোটি পিস। উৎপাদন হচ্ছে ২০ কোটি ৪৫ লাখ পিস। অর্থাৎ এক কোটি ৪৫ লাখ পিস ডিম উদ্বৃত্ত। জনপ্রতি ২৫০ মিলিলিটার প্রতিদিনের আদর্শ মান হলে বছরে এক লাখ ৬৭ হাজার টন দুধের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বছরে ৮০ হাজার টন উদ্বৃত্ত দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। জনপ্রতি ১২০ গ্রাম মাংসের প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুসারে জেলায় বছরে প্রয়োজন ৮০ হাজার টন। বছরে উৎপাদন এক লাখ ৪৬ হাজার টন। অর্থাৎ ৬৬ হাজার টন মাংস উদ্বৃত্ত।
জেলার লেয়ার ও সোনালী মুরগির খামার থেকে প্রয়োজনীয় ডিম পাওয়া যাচ্ছে। দুধের জন্যে জেলায় এক হাজার ৩৬৪টি গাভীর খামার উৎপাদনে রয়েছে। আর মাংসের উৎস হিসেবে ব্রয়লার মুরগীর ৮২০টি খামার, ছয় হাজার ৪০০টি গরু হ্রষ্টপুষ্টকরণ খামার, ৩৮৬টি ছাগলের খামার, ২১৬টি ভেড়ার খামার, ৭৫টি মহিষের খামার, দুই হাজার ১২০টি কবুতরের খামার, ২৫০টি টার্কির খামার কাজ করছে। সমুদয় খামারের সকল প্রণিসম্পদের আর্থিক মূল্য তিন হাজার ৬১৯ কোটি টাকা।
শহরের চৌকিরপাড় এলাকার সফল নারী উদ্যোক্তা হোসনে আরা। তার তৈরি জিশান পোল্ট্রি হ্যাচারি জেলার মধ্যে সবচে বড়-যেখানে বছরে অন্তত ৩০ লাখ মুরগির বাচ্চা ফুটানো হয়। এসব বাচ্চা নিয়ে শত শত খামারী মুরগির মাংস উৎপাদন করছেন।
হোসনে আরা তার লক্ষ্য সম্পর্কে বললেন, এখনো অনেক দূরে যেতে হবে। এন্টিবায়োটিকমুক্ত মুরগি পালনে সফলতা অর্জনের চেষ্টা করছি। দেশ ও জাতিকে নিরাপদ মাংস উপহার দেয়ার পাশাপাশি লক্ষ্য আছে বিদেশে রপ্তানির।
উত্তরা গণভবনের কাছাকাছি দিঘাপতিয়া এলাকায় বিগত ১৫ বছর ধরে ডেইরি ফার্ম করছেন মনসুর রহমান। জমজম ডেইরি ফার্ম এর এ সত্ত্বাধিকারীর খামারে গাভী ও বছুরসহ ৬০টি গরু। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খামারের দুধ যায় মিষ্টির কাঁচামাল ছানা তৈরিতে। লাভজনক এ খামারকে উপলক্ষ করে মনসুর রহমান বেসরকারী পর্যায়ে পশু হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন। এ লক্ষ্যে তিনি তার ছেলেকে ভেটেরিনারীতে গ্রাজুয়েট পড়াচ্ছেন।
ছাতনী ইউনিয়নের ফরিদপুর আমহাটি গ্রামের রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে গরু হ্রষ্টপুষ্টকরণের খামার করছেন, পাশাপাশি পশু চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করছেন।
তিনি বলেন, নাটোরে গরুর খামার সম্ভাবনাময় ও লাভজনক। তাই এর পরিধিও বাড়ছে।
নাটোর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সেলিম উদ্দিন জানান, প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রাণিসম্পদ বিভাগ সবসময় খামারীদের সাথে আছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, নাটোরে প্রাণিসম্পদ সেক্টরে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। তাদের প্রচেস্টা এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের আন্তরিক সহযোগিতায় নাটোর এখন ডিম, দুধ ও মাংসে উদ্বৃত্ত জেলা। ভবিষ্যতে উৎপাদনের এ পরিধি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএসএস
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন