দেশে মুরগির মাংস বেশির ভাগই আসে খামার থেকে। ব্রয়লার বা অন্য জাতের মুরগি, যেগুলো বাণিজ্যিকভাবে লালন করা হয়, বাজারে সেগুলোর সরবরাহ বেশি। গড়পড়তা ক্রেতা কেনেও তাই। তবে দেশি মুরগির চাহিদা কিন্তু আছেই, তা দাম একটু বেশি হলেও। প্রথম আলো অনলাইন
দেশি মুরগির লালনপালন অবশ্য বাণিজ্যিকভাবে নেই। গ্রামের গৃহস্থ বা চাষিরা নিজ বাড়িতে যেসব মুরগি পালেন, সেগুলো হাটবাজারে বিক্রির সূত্র ধরে পাইকারদের কাছে চলে আসে। পরে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে চলে যায়। তবে তা সীমিত আকারে।
উন্নত জাতের ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগির দিকে খামারিদের ঝুঁকে পড়ার কারণও আছে। এগুলোর বংশবৃদ্ধি ভালো এবং বাড়েও দ্রæত। তবে দেশি মুরগির বাজারের এই দৈন্য ঘুচতে যাচ্ছে শিগগিরই। কারণ, এর জাত উন্নয়নে সাফল্য পেয়েছে রাজধানীর অদূরে সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)।
গবেষকেরা জানান, জাত উন্নয়নের ফলে দেশি মুরগির ডিম উৎপাদন বেড়েছে, ডিমের ওজন বেড়েছে, প্রথম ডিম পাড়ার বয়স কমেছে এবং দৈহিক ওজন বেড়েছে। উন্নত জাতের এই দেশি মুরগির মাংস ও ডিমের স্বাদ রয়েছে আগের মতো। বাংলাদেশে বহু জাতের দেশি মুরগির দেখা মেলে।
শরীরজুড়ে বাহারি রঙের পালক, আকৃতিতে খানিকটা ছোট আর খোলামেলা জায়গায় বিচরণ করে থাকে এসব মুরগি। দেখতে একই রকম হলেও অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন ধরনের নামকরণ হয়েছে এসব মুরগির। এর মধ্যে আছিল, জাঙ্গল ফাউল, ইয়াসিন, টাইগার বার্ড, ডুয়ার্ফ বার্ড নামগুলো বেশি পরিচিত।
মিসর ও আমেরিকান জাতের মুরগির ব্রিডিংয়ে সোনালি জাতের আরেকটি মুরগি পাওয়া যাচ্ছে। এই জাতের মুরগি দেখতে অনেকটা দেশি মুরগির মতোই। মাংসের স্বাদও কাছাকাছি। তবে দেশি মুরগির মাংসের তুলনায় কিছুটা নরম। সোনালি মুরগির মধ্যেও যেন বাঙালিরা দেশি মুরগির স্বাদ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এই চিন্তা থেকে বিএলআরআই ২০১০ সালে ‘দেশি মুরগি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে।
বিএলআরআইয়ের দেশি মুরগির জাত উন্নয়নে বিশাল গবেষণাগার সাভারে রয়েছে। সেই গবেষণাগারে দীর্ঘ আট বছর ধরে দেশি মুরগির জাত উন্নয়নের কার্যক্রম। এই প্রকল্পের সাত সদস্যের গবেষক দলের প্রধান বিএলআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাকিলা ফারুক। তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য ছিলো কমন দেশি, হিলি, গলাছিলা এই তিন ধরনের দেশি মুরগি সংগ্রহ করে এর মৌলিক মানোন্নয়ন এবং সিলেক্টিভ ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে বিশেষ ধরনের উৎপাদনক্ষম মুরগির জাত তৈরি করা।
এসব বলতে গিয়ে শাকিলা ফারুক বলেন, কমন দেশি, হিলি বা পাহাড়ের মুরগি ও গলাছিলা মুরগির শারীরিক গড়ন অন্যান্য জাতের দেশি মুরগির চেয়ে বড় হয়। প্রথম ডিমও আগে আসে। স্থানীয় দেশি জাতের একটি মুরগি থেকে প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০টি ডিম পাওয়া যেত। এসব ডিমের ওজন ৩৫-৪০ গ্রাম। জাত উন্নয়নের পর দেশি মুরগি থেকে বছরে ১৫০ থেকে ১৮০টি ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এর একটি ডিমের ওজন ৫০ গ্রাম। স্থানীয় দেশি মুরগি ১৬৮ থেকে ১৮০ দিনে প্রথম ডিম পাড়ে। উন্নত জাতের দেশি মুরগি প্রথম ডিম দেয় ১৪৮ থেকে ১৫২ দিনের মধ্যে।
জাত উন্নয়ন করা দেশি মুরগি আট সপ্তাহে খাবার উপযোগী হয়। এ কথা জানিয়ে শাকিলা ফারুক বলেন, এই সময়ে স্থানীয় জাতের দেশি মুরগির ওজন হয় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। কিন্তু জাত উন্নয়নের পর আট সপ্তাহে একটি দেশি মুরগির ওজন হয় ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ
এগ্রিফার্মস২৪/জেডএইচ