দেশে চকলেট তৈরির ফল ‘কোকোয়া’ চাষের সম্ভাবনা

46

দেশে চকলেট তৈরির ফল ‘কোকোয়া’ চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে সরকারের পরীক্ষামূলক চাষে সুফল এসেছে। কৃষকরা চাষ করলেও সফলতা পাবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বনের এই ফলের গাছ আফ্রিকাজুড়ে চাষ হয়। বিশ্বজুড়ে রপ্তানির শীর্ষে এসব দেশ। অ্যাসিডিক বা অম্লীয় মাটি এই চাষের জন্য উপযোগী। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলসহ লাল মাটির অঞ্চল এটির ভালো ফলনের জন্য উপযোগী।

২০১৪ সালে ভিয়েতনাম থেকে গবেষণার জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু চারা আনা হয়। বর্তমানে পরিণত হয়ে ফল দিচ্ছে সেই ‘কোকোয়া’ ফলের গাছ। পরিপক্ব ফল তুলে খাওয়া যেমন যাচ্ছে, প্রক্রিয়া করে তৈরি করা হচ্ছে চারাগাছও।

সম্প্রতি ঢাকার সাভারের হর্টিকালচার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ‘কোকোয়া’ ফলের দুটি গাছ সেখানে বেড়ে উঠেছে। দুটি গাছই পরিণত। ঝোপালো ধরনের সাত-আট মিটার উচ্চতার গাছ দুটিতে ধরে আছে ফুল থেকে শুরু করে পরিপক্ক অসংখ্য ফল। এই ফলের ইতিহাস, রোপণ পদ্ধতি ও উপযোগিতাসহ নানা দিক তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।

হর্টিকালচার সেন্টারের সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এই ফলের চারা এনে রোপণ করা হয়। সাভারে দুটি গাছ রয়েছে। প্রায় তিন-চার বছর ধরে গাছে ফুল ও ফল ধরছে।

কোকোয়া চাষের পদ্ধতির বিষয়ে হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কোকোয়া ফলের ভেতরে থাকা বীজ থেকে এটির চারা উৎপাদন করা যায়। এছাড়া কলমের মাধ্যমেও চারা উৎপাদন করা যায়। চারা রোপণের পাঁচ-ছয় বছর পর থেকে ফল ধরা শুরু করে। বছরে তিন-চারবার ফলন হয়। ফলে সারাবছরই কমবেশি ফল পাওয়া যায়। এ ফলের গাছে তেমন কোনো রোগ হয় না বললেই চলে। দেশীয় ছাত্রাপোকা (মিলিবাগ) হলেও সেটি আপনা-আপনি প্রতিরোধ করে ফেলে।’

তিনি বলেন, ‘ফুল থেকে ফল হয়ে সেটি পাকতে সময় লাগে তিন-চার মাস। পাকার পর কোনোটা ধূসর কোনোটা হলুদ রং ধারণ করে। ভেতরে ফল থাকে। খোসা ছাড়িয়ে ফল বের করতে হয়। পাকা ফল খাওয়া যায়। স্বাদ টকমিষ্টি। আবার ফল বের করে সেটিকে প্রক্রিয়াজাত করে চকলেটের পাউডার তৈরির জন্য প্রস্তুত করা যায়।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ফলের রং বাদামি, ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১০ সেন্টিমিটার পুরু, বাইরের আবরণ চামড়ার মতো শক্ত। প্রতিটি ফলে ২০-৪০টিরও বেশি বীজ থাকে। বীজগুলো প্রথমে কলাপাতায় মুড়িয়ে গাঁজানো হয়। পরে রোদে শুকিয়ে সেদ্ধ করে খোসা ছাড়ালেই পরিষ্কার একটি শাঁস পাওয়া যায়। এই শাঁসকে বলা হয় কোকোবিন। কোকোবিনের গুঁড়োই চকলেট পণ্য তৈরির কাজে ব্যবহƒত হয়। উৎকৃষ্ট মানের চকোলেট, মাখন, আইসক্রিম, রুটি, পুডিং, প্রসাধনসামগ্রী ও পানীয় তৈরিতে কোকো ফল ব্যাপকহারে ব্যবহƒত হয়,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘পূর্ণবয়স্ক একটি কোকোয়া গাছ থেকে ৩৫ কেজি ফল পাওয়া যায়। প্রক্রিয়াজাত করলে সেখান থেকে ৩০ কেজি চকলেট পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি চকলেট পাউডারের দাম বর্তমানে প্রায় ৪০ ডলার। ওই হিসেবে একটি গাছ থেকে বছরে এক হাজার ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব।’

সাভারে এটি চাষ সম্ভব কীভাবে হলো-এমন প্রশ্নে দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘চারা বেড়ে ওঠার জন্য অ্যাসিডিক বা অম্লীয় মাটির প্রয়োজন হয়। সাভারের যে লালমাটি সেটি এই গাছের চারা বেড়ে ওঠার উপযোগী। আমাদের এখানে গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। এখন ফল দিচ্ছে। একইভাবে দেশের পাহাড়ি অঞ্চলের মাটিও উপযোগী। ছাদবাগানেও কোকো ফল চাষ করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অন্তত পাঁচ-সাত লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছে, যেখানে এই গাছ চাষের উপযোগী মাটি রয়েছে। ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং কে-সমৃদ্ধ এই ফলের চকলেট পাউডার শতভাগ বিদেশ থেকে আনতে হয়। দেশে এটির উৎপাদন বাড়লে আয়ের বড় পথ উন্মোচিত হতে পারে।’

এই ফলের চাষ বৃদ্ধিতে সরকারি উদ্যোগ রয়েছে কি না-এ প্রশ্নে দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমরা চারা উৎপাদন করছি। সেগুলো নামমাত্র মূল্যে ও বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। অনেকেই এটি চাষ করছেন। উৎসাহিত হচ্ছেন চাষে। এটির আরও প্রসারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয়া রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সবাই আন্তরিক।’