শিমুল, নরসিংদী থেকে : জলডুগি আনারস চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে নরসিংদীতে। এই জাতের আনারস আকারে ছোট হলেও খেতে সুস্বাদু। এ কারণে ক্রেতাচাহিদাও বেশ। অন্যদিকে ফলনও ভাল।
নরসিংদীতে বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হওয়া এই জলডুগির আরেকটি নাম হানিকুইন। দু’নামেই এই আনারসটি পরিচিত। ক্রেতাদের চাহিদা ও ফলন ভালো হওয়ায় এই জেলায় গড়ে উঠছে আনারসের নতুন নতুন বাগান ।
কৃষকরা জানান, সাধারনত পাহাড়ি লাল এঁটেল মাটি আনারস চাষের উপযোগী। নরসিংদীর পলাশ, শিবপুর ও বেলাব উপজেলায় কমবেশি আনারস উৎপন্ন হলেও জেলার উৎপাদিত আনারসের ৯০ ভাগই উৎপন্ন হয় পলাশ উপজেলায়। পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের রাবান,বরাবো, সাতটেকিয়া ও পুরাইতলী এলাকা আনারস উৎপাদনের জন্যই সমৃদ্ধ। কেবল আনারস চাষ করেই এখানের কয়েকশ কৃষক স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
এলাকাবাসী জানান, ৮ থেকে ১০ বছর আগেও পলাশ উপজেলার লাল মাটির অনেক জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকতো। কোথাও কোথাও কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলজ গাছের বাগান করা হলেও বাগানের জমিতে চাষ হতো না কোনও ফসল। তবে এখন আর পতিত নেই। বাড়ির আঙিনা, পতিত জমি ও বিভিন্ন ফলের বাগানের জমিতেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে দেশীয় জাতের আনারস।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর নরসিংদী জেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫৩ হেক্টর বেশি।
পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের বরাবো গ্রামের চাষি প্রমোদ দে জানান, সময়মতো চারা,সার ও প্রয়োজনীয় উপকরণের যোগান পাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর আনারসের ফলন ভাল হয়েছে।
একই উপজেলার কুড়াইতলী গ্রামের আনারস চাষি সুনীল দাস জানান, আনারস চাষে নিয়মিতভাবে তেমন শ্রম দিতে হয় না। চারা রোপনে পুঁজি বিনিয়োগের তুলনায় লাভ বেশি পাওয়া যায়। প্রতি পিস আনারস ১০ থেকে ১৫ টাকায় জমি থেকেই কিনে নিয়ে যান পাইকারি ক্রেতারা।
কাটাবেড় গ্রামের চাষি প্রদীপ দাস জানালেন, কাঁঠাল বাগান, আম বাগান, লটকন বাগান ও লিচু বাগানের মধ্যেও আনারসের চাষ করা যায়। ফলন শুরু হলে আনারস ও চারা বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়।
বেলাব উপজেলার বাঙ্গালগাঁও গ্রামের ফরিদ উদ্দিন জানান, এ বছর তিনি তার ২৫ বিঘা জমি থেকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করতে পারবেন। চারার সংখ্যা বাড়তে থাকায় আগামী বছর একই জমি থেকে ১০ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করা যাবে।
নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক লতাফত হোসেন জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আনারসের চাষ বৃদ্ধিতে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন আনারস বাগান গড়ে উঠছে। এ বছর সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে এসব আনারস সংরক্ষণ করা গেলে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪.কম/এম