চাঁদপুরে দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজার। রমজান আসার পর থেকে জেলার হাটবাজারে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। প্রায় সব ধরনের পণ্যই বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নিয়েও কূলকিনারা করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে জেলায় স্বল্প আয়ের মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানের আগে গত সপ্তাহে সবজিসহ মুদি দোকানের পণ্য যে দামে বিক্রি হচ্ছিল, আজকেও তা অপরিবর্তিত। কোনো পণ্যের দাম কমেনি, রমজান মাসে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। কমেছে শুধু কয়েক প্রকার মৌসুমি সবজির দাম। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা সরকার বললেও প্রকৃতপক্ষে বাজারে এর প্রতিফলন যৎসামান্যই। রোজা শুরুর আগের বাড়তি দাম আরও বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ।
গতকাল বাজারে প্রতিকেজি শিম ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, সাদা মুলা ৫০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৯০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, ক্ষীরাই ৫০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, করলা ১৩০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১২০ টাকা, সজনে ২০০ টাকা, কচুরমুখি ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা ও ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০-১০০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা ও বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হয়েছে ৪০-৬০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় করলা, পটোল, ঢ্যাঁড়শ ও কাঁচা মরিচের দাম কমেছে। আর গাজর, টমেটো, ক্ষীরাই ও ফুলকপির দাম বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য জিনিসের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
এছাড়া গতকাল মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯০-১৩০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৩৫-৪০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৫০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০ ও চায়না আদা ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০-২০ টাকা এবং আলুর দাম বেড়েছে আরও পাঁচ টাকা।
বাজারে আলু কিনতে আসা ইমান হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্য নেই। বাজারে আসলেই দেখি যে কোনো পণ্যের প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে আর পারছি না পরিবারের চাহিদা মেটাতে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
এদিকে গতকাল মুদি দোকানের পণ্যের দামও ছিল অপরিবর্তিত। তবে এক লাফে ৫৫ টাকা বেড়ে গেছে খেসারির ডালের দাম। দোকানিরা বলছেন, মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে বাজার তদারকি ব্যবস্থা ঢিলেঢালা হওয়ায়। গতকাল ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারির ডাল ১৬০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে খেসারির ডাল ছিল ১১০ টাকা কেজি, গতকাল তা হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি।
হাজীগঞ্জ বাজারের মুদি দোকানি মান্নান পাটওয়ারী বলেন, খেসারির ডাল এখন বাজারে পাওয়া যায় না বললেই চলে। আর এই ঘাটতির কারণেই দাম বেড়ে গেছে।
খেসারির ডাল কিনতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানি বলেন, দাম শুধু বাড়ছেই। বাজার তদারকি না করে হকার দৌড়ায় কেউ কেউ। মনে হয় প্রশাসনের কতিপয় কর্তাব্যক্তি আর সিন্ডিকেট মিলিমিশে একাকার। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বদনাম কামাচ্ছে সরকার।
এছাড়া মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের দাম ছিল অপরিবর্তিত। গতকাল প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা ও খোলা সরষের তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া গতকাল বাজারে ইলিশ মাছ আকারভেদে প্রতিকেজি এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০-৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০-১৪০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১৩০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, বেলে মাছ ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০-৮০০ টাকা, কাজলী ১৪০০ টাকা ও নাইলোটিকা ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
মাছ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রমজান মাসে মাছের প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ৫০-১৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
গতকাল ব্রয়লার মুরগি ২২০-২১৫ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মুরগির লাল ডিম ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১২৫ টাকা ডজন দরে বিক্রি হয়।
মুরগি ব্যবসায়ী ইলিয়াস জানান, এক দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-৩০ টাকা।
খেজুর কিনতে আসা আবদুল করিম নামে এক ক্রেতা জানিয়েছেন, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে জেলায় কোথাও খেজুর বিক্রি হয় না। খেজুর ব্যবসায়ীরা নিজেদের মর্জিমাফিক দামের ট্যাগ লাগিয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে খেজুর বিক্রি করছে। বাজারে ৪০০ টাকা কেজির নিচে খাওয়ার উপযোগী কোনো খেজুর নেই।
তরমুজের বাজারেও চারগুণ-পাঁচগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে তরমুজ। এসব তদারকি করতে শুনিনি কাউকে। এককথায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
জেলা ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা নূর হোসেন রুবেল শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি। জরিমানা করা হচ্ছে বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীকে। বাজারে ভোক্তাদের স্বার্থে নিয়মিত আমাদের তদারকি ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।