সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ। এরই মধ্যে ইলিশ শিকারে গভীর সাগরে যাত্রা করেছে শত শত মাছ ধরা ট্রলার। তবে এই ৬৫ দিনকে ঘিরে একদিকে যেমন ছিল জেলেদের ক্ষোভ ও সংকট, আবার অন্যদিকে মৎস্য গবেষকদের ছিল নানা প্রশ্ন।
সামুদ্রিক মাছের বাধাহীন প্রজনন ও সংরক্ষণে গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। তবে অবরোধ চলাকালে ভারতীয় ও দেশীয় প্রভাবশালী ছেলেদের মাছ শিকার অব্যাহত থাকার অভিযোগ এনে মৎস্য গবেষকরা বলছেন, আইনের অপব্যবহারের কারণে প্রজনন ও সংরক্ষণ অনেকটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বছরজুড়ে তেমন ইলিশ ধরা না পড়ায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জেলেরা। তবে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার পরে সমুদ্রে গিয়ে ইলিশের দেখা পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন উপকূলের প্রায় ৩০ হাজার জেলে। আর মৎস্য আড়তদার ও ট্রলার মালিকরা বলছেন, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে সেই আশায় লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ট্রলার মেরামত ও সরঞ্জাম নিয়ে সমুদ্রে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছি, রুপালি ইলিশের দেখা পেলেই সম্ভব হবে পেছনের ঋণ পরিশোধ করা।
এমবি রায়হান ট্রলারের মাঝি শহিদুল ইসলাম জানান, ৬৫ দিনের অবরোধে বাড়িতে বসে ছিলাম। নতুন জাল বানিয়েছি, ট্রলার মেরামত করেছি। সরকার যে চাল দিয়েছে, তা দিয়ে কি আর সংসার চলে? ২০ হাজার টাকা সুদে এনে খেয়েছি। এখন যদি অবরোধের পরে মাছ না হয় তাহলে এগুলো পরিশোধ করব কীভাবে?
আদিল ট্রলারের মালিক রহিম খান জানান, জেলেরা ৬৫ দিনের অবরোধে মাছ শিকারে নামেনি। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রভাবশালী জেলে ও ভারতীয় জেলেরা যখন মাছ শিকার করে নিচ্ছে, তখন আমরা কেন ক্ষতিগ্রস্ত হব?
আলীপুর মৎস্য বন্দরের সাত ফিশের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে শত শত মানুষ এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। সবার মধ্যে একটি আমেজ বিরাজ করছে রুপালি ইলিশের আশায়। আজকে রাত থেকে জেলেরা সমুদ্রে পাড়ি জমাবে। আমরা আশাবাদী, রুপালি ইলিশের দেখা মিলবে।
সমুদ্রের নীল অর্থনীতি, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, মূলত সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য এই ৬৫ দিনের অবরোধ। তবে এর মধ্যে জেলেরা নির্দ্বিধায় সমুদ্রে মাছ শিকার করেছে, তাতে একদিকে সরকারের বরাদ্দও পেল এবং সামুদ্রিক মাছও সংরক্ষণ হলো না। এভাবে চলতে থাকলে সমুদ্র থেকে মাছ হারিয়ে যেতে থাকবে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, ৬৫ দিনের অবরোধে প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলেকে ৮৫ কেজি করে চাল দিয়েছে। শিগগিরই আরও কিছু জেলে নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। জেলেরা সমুদ্রে গেলে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পরার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ ইলিশের উৎপাদন আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই অবরোধে প্রশাসন তৎপর ছিল। এর মধ্যেও অনেক অসাধু জেলে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে, যে কারণে আমরা ছয় লাখ টাকা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানাসহ অনেককে আইনের আওতায় এনেছি।