ঘিওরে ভয়াবহ মাত্রায় ল্যাম্পি স্কিন গরু নিয়ে আতঙ্কে খামারি-কৃষক

115

ঘিওরে হঠাৎ করে বেড়েছে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগ। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের খামারি ও প্রান্তিক কৃষক। পল্লি পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসা ও অর্থ অপচয়ের শিকার হলেও মিলছে না কোনো সমাধান। এদিকে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।

উপজেলার বানিয়াজুরী, নালী, বালিয়াখোড়া, ঘিওর সদর, সিংজুরী, পয়লা ও বড়টিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হঠাৎ করে গবাদি পশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। তবে আক্রান্তের তুলনায় কম মারা যাচ্ছে গরু। প্রান্তিক কৃষকের পাশাপাশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন খামারিরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেককে কবিরাজ ও পল্লি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আক্রান্ত গরুর মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চিকিৎসকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। নিম্নমানের ওষুধ দিয়ে খামারিদের সঙ্গে করছে প্রতারণা। অনেক ক্ষেত্রে ভুল চিকিত্সার শিকার হতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘিওরে মোট ছোট-বড় ১ হাজার ২৮০টি খামার আছে। এতে গরুর সংখ্যা ৬৩ হাজার ৪২২। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এ রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা অনেক বেশি। গত এক মাসে এ রোগে আক্রান্ত শতাধিক গরুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. ফারুক হোসাইন বলেন, লাম্পি স্কিন গবাদি পশুর নতুন একটি রোগ। যার প্রতিষেধক বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে পাওয়া গেলেও সরকারিভাবে এখনো আসেনি। আক্রান্ত পশুর প্রথমে সামনের পা ফুলে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে বড় বড় গুটি দেখা দেয়। এক সপ্তাহ পরে গুটিগুলো গলে ঘা হয়। ঘা থেকে অনবরত তরল পদার্থ বের হয়। অল্প দিনে গরু শুকিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মারা যায়। তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পার্বতী পাল বলেন, ‘খামারিদের তুলনায় প্রান্তিক কৃষকদের গরু লাম্পি স্কিন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা নেই। গরুর সঠিক পরিচর্যা, আক্রান্ত পশুকে মশারির ভেতর রাখা ও বাসস্থান পরিষ্কারপরিছন্ন রাখার মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। আমরা মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ পশু চিকিৎসকদের এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করতে বলা হয়েছে। ভুল ও অপচিকিৎসা দিয়ে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্তকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।