নেত্রকোনায় বিদেশী ফল রাম্বুটান চাষে সাফল্য

744

চাষী
বিদেশী ফল রাম্বুটানের চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশীয় মাটি ও আবহাওয়া উপযোগীতায় ওষুধীগুন সমৃদ্ধ ফল রাম্বুটানের ফলনও হচ্ছে ভালো। রপ্তানির সম্ভাবনাময় এই ফলের উৎপাদন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে জানায় নেত্রকোনা কৃষি বিভাগ।

থাইল্যান্ড,ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়া,লাউস,কম্বোডিয়ার অঞ্চলের ফল রাম্বুটান। খোসা ছাড়ালে ফলের ভেতরের খাবার উপযোগী অংশটি দেখতে ও স্বাদে লিচুর মতো। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, মিনারেল ছাড়া অন্য আরো ভিটামিন সমৃদ্ধ থাকায় রাম্বুটানের কদর বেশি। চারা রোপনের ৪ থেকে ৫ বছর পর গাছে ফলন আসে। চৈত্র মাসে গাছে ফুল হয়ে শ্রাবন মাসে ফল পাঁকতে শুরু করে। একটি গাছে শুরুর দিকে ২০থেকে ২৫ কেজি ফলন দেয় । পরে তা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ কেজিতে দাড়ায়। স্থানীয় বাজারে ৪শ টাকা কেজি দরে বিক্রী হচ্ছে এই ফল।

মালয়েশিয়া ফেরত নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর উইনিয়নের হরিপুর গ্রামের রাম্বুটানের সফল চাষী মোঃ উসমান গণি জানান, ১৯৯৩ সালে দেশে ফেরার সময় পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানোর জন্য ২ কেজি রাম্বুটান নিয়ে আসেন তিনি। ফল খেয়ে বীজ থেকে বাড়ির আঙ্গিনায় দুটি চারা গাছের জন্ম হয়। সঠিক পরিচর্যা থেকে চারা গাছ বড় হওয়ার পর একটি গাছে ১৯৯৮ এর মার্চ মাসে গাছে প্রথম ফলন হয় রাম্বুটান। বর্তমানে গাছ রয়েছে বেশ কয়েকটি।

ওসমানগণি আরো জানান,এক একটি বড় গাছ থেকে মৌসুমে ৪০ থেকে ৫০ কেজি রাম্বুটান সংগ্রহ করেন তিনি। প্রতিকেজি ফল স্থানীয় বাজারে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তিনি এখন রাম্বুটান ছাড়াও ৭০ থেকে ৮০ প্রকার ফল ও ঔষধি গাছ লাগিয়ে চাষ করে এভাবে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। থাইল্যান্ডের এ ফল বাংলাদেশে চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসমান গণি আরো বলেন আমি বাংলাদেশের প্রথম একমাত্র রাম্বুটান চাষি আমার সাফল্যে অন্যেরা এ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। চারাগাছ তৈরী করে তা বিক্রী করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

উসমান গণির রাম্বুটান চাষ এলাকায় সাড়া ফেলেছে। তাকে দেখে ফলটি আবাদে উৎসাহিত হচ্ছেন অনেকেই। ওসমান গণির পরামর্শ নিয়ে নিজেরা চাষ করছেন জানিয়ে স্থানীয়রা বলেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকেই এসে ফল নিচ্ছেন,চাষ করতে চারাও নিচ্ছেন রাম্বুটানের। কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ আর পাকাপোক্ত অর্থাৎ খাবার উপযোগী হলে গাঢ় লাল রঙের হয় রাম্বুটান। প্রতিটি চারা বিক্রী হচ্ছে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ফলটির উৎপাদন বাড়ালে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে জানিয়ে নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, কলম পদ্ধতিতে এলাকা উপযোগী করে চাষ বাড়াতে মানসম্পন্ন উদ্যান প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েয়ে বলেও জানান তিনি । ফলন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফুল থেকে পরিপূর্ণ ফল হতে সময় লাগে ২৮ দিন। খাওয়ার উপযোগী অর্থাৎ পাঁকতে ৩২ দিনের মত লাগে। উর্বর লাল মাটিতে ফলন ভালো পাওয়া যায়।

লাভজনক বিদেশী সুস্বাদু ফল রাম্বুটান দেশের বিভিন্ন স্থানে এর আবাদের আওতা বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় ফল চাষীরা।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ