পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ, অর্থনেতিক ভাবে স্বাবলম্বী অনেকে

250

কফি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। এই জনপ্রিয় কফির চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখছেন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের কৃষকরা। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের উপযোগী হওয়ায় এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ঝুঁকছেন কফি চাষে। পাহাড়ে উৎপাদিত অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা দু’জাতের কফি রপ্তানী হচ্ছে বিদেশেও।

পার্বত্য চট্টগ্রামে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ছয়শ কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নেয়ার মাধ্যমে পাহাড়ে সীমিত আকারে কফি চাষ আরম্ভ হয়। তবে দীর্ঘ ২৩ বছর পর পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে সাড়া জাগাচ্ছে কফি চাষ। কফি চাষ সম্প্রসারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের ফারুক পাড়া, লাইমি পাড়া, গেৎশিমনি পাড়াসহ রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার কয়েকটি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কফির চাষ হচ্ছে। জেলায় কফি চাষির সংখ্যা এখন ৫৮৬ জন। এ বছর ১৪৫ হেক্টর জমিতে কফি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় কফি চাষ বাড়াতে এ বছর কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে চারা ও সার।

কফি চাষিরা জানায়, কফি চাষের জন্য আলাদা কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। যেকোনো গাছের ছায়া বা কোনো ফলের বাগানের ফাঁকে ফাঁকে কফির চাষ করা যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি পেলে এবং কফির চারার সঠিক যত্ন নেওয়া গেলে ফলন ভালো হয়। পাশাপাশি চাষিদের পরিশ্রমের কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছরে বান্দরবান জেলায় ৮ মেট্রিক টনেরও বেশি কফি উৎপাদন হয়েছে। বাজারে শুকনো প্রতি কেজি কফি ৩০০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর এতে ভালো লাভবান হন কৃষকরা।

স্থানীয় সফল চাষী এ্যাম্পু পাড়ার মেনরু ম্রো, সাক্য ম্রো বলেন, গতবছরের তুলনায় এবছর বাগানে কফির ফলন ভালো হয়েছে। তবে কিছুকিছু গাছে পোকার আক্রমণে ফলের ক্ষতি হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় বিক্রি করে ভালো দামও পাওয়া যাবে। উৎপাদিত কফি খোসা ছাড়া প্রতিকেজি ২৫০ ষাট টাকায় এবং খোসাযুক্ত কফি দেড়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় উদ্যোক্তা সিইয়ং খুমী বলেন, চারা রোপনের ৩ বছরের মাথায় কফি উৎপাদিত হয়। একেকটা কফি গাছ থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কিন্তু শুরুর দিকে অনেক চাষী আগ্রহ দেখায়নি। চারা লাগিয়েও লাভ হবেনা মনে করে পরিচর্যার কিছুই করেনি এমন চাষীও রয়েছে। তবে সময়ের পেক্ষাপটে পরিস্থিতি বদলে গেছে। চাষীদের আগ্রহে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ বাড়ছে বান্দরবান জেলায়। চারা লাগানোর পর বাগান পরিচর্যা ও ফল সংগ্রহের পর কফি প্রক্রিয়া সর্ম্পকে প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। উৎপাদিত কফির প্রক্রিয়াজাতকরণে ছোটখাট কারখানা করা গেলে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে।

এ বিষয়ে বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারে উপ-পরিচালক ড.সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, ইতিমধ্যে হর্টিকালচার সেন্টারে উন্নতমানের কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। কফি চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হর্টিকাল সেন্টারের উদ্যোগে বান্দরবান সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, রোয়াংছড়ি এবং থানচি ছয়টি উপজেলায় তালিকাভূক্ত চাষীদের নতুন করে দেড়শ’টি করে কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে। লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় কফি চারার নার্সারী গড়ে তোলা হয়েছে।