গবাদি পশু পালনে ভাগ্য বদল ফরিদপুরের সমবায়ীদের

127

ঋণ নিয়ে উন্নত জাতের গাভী ও দুগ্ধ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্য হ্রাসকরণ ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলার ৩২৫ জন সমবায়ী নিজেদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে গবাদি পশু পালন করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর সদর উপজেলা সমবায় সমিতির ‘উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে কৈজুরী ও গেরদা নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির ১০০ জন করে দুই সমিতির মোট ২০০ জন নারী সমবায়ী উন্নত জাতের গাভী পালনের লক্ষ্য নিয়ে প্রত্যেকে এক লাখ টাকা করে ঋণ গ্রহণ করেন।

অপরদিকে দুগ্ধ সমবায় সমিতির কার্যক্রম বিস্তৃতকরণের মাধ্যমে ‘বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা জেলা দারিদ্র হ্রাসকরণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়’ উপজেলার নর্থ চ্যানেল প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির ১২৫ জন নারী ও পুরুষ সমবায়ী সদস্য দুগ্ধ উৎপাদনের লক্ষ্যে একই পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেন। এ দুই প্রকল্পের আওতাধীন ৩২৫ জন সমবায়ী সদস্য ঋণ প্রকল্পের নিজ নিজ নিয়মানুযায়ী উন্নত জাতের গাভী ও দুগ্ধ উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় খামার তৈরি করে গবাদি পশু (গরু) পালন শুরু করেন। অনেক সমবায়ী সদস্য দুটি গরু নিয়ে খামার শুরু করলেও বর্তমানে অনেকের খামারে ৮-১০ গরুও রয়েছে। একই সঙ্গে দুগ্ধ প্রকল্পের অনেক সমবায়ী দুধ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে বাজারজাত করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ প্রকল্পের সদস্যরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে অধিকাংশ খামারিই উন্নত জাতের গাভী ও দুগ্ধ উৎপাদনে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন।

বাকুন্ডা এলাকার আসমা আক্তার, মোসাম্মাৎ রুমা, শিখা আক্তার, শিউলী বেগমসহ কয়েকজন খামারি জানান, ২০১৬ সালে নামমাত্র সুদে ফরিদপুর সদর উপজেলা সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে আমরা গবাদি পশু পালন শুরু করি। তবে এ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি প্রথম বছরে পরিশোধ করতে হয়নি বিধায় আমরা উত্তোলনকৃত ঋণের অর্থ দিয়ে প্রথম বছরেই ভালোভাবে খামার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। পাশাপাশি পরবর্তী বছরের আয় থেকে ২ বছরে মোট ২০ কিস্তির মাধ্যমে আমরা উত্তোলনকৃত ঋণের টাকা পরিশোধ করছি। এ উৎপাদনের কারণে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সমবায় সমিতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট নারীদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও মনে করেন তারা। একই সঙ্গে গবাদি পশুপালন করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য হ্রাসকরণ ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও তারা প্রত্যাশা করেন। যদিও গো-খাদ্যের বাজারমূল্য বৃদ্ধিসহ খামার পরিচর্যা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় ঋণের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়ার দাবি তাদের।

এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা সমবায় অফিসার মুহম্মদ আমানুর রহমান জানান, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মানুষের দারিদ্র্য দূর করে ব্যাপক উৎপাদন কর্মযজ্ঞ এবং সদস্যদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে সমবায় সমিতি। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের এ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের অতি দরিদ্র জনগণ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের আর্থিক জিডিপির হার বৃদ্ধিতেও তারা বিশেষ অবদান রাখতে পারবে।

সমবায় সমিতি একটি জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক আর্থসামাজিক প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে আমানুর রহমান জানান, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার পাশাপাশি সমাজে পিছিয়ে পড়া হতদরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় এসব পিছিয়ে পড়া জনগণের জীবনমান উন্নয়নে নামমাত্র সুদে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয়েছে।