ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার : অভাব-অনটনের সংসারে থেকে অনেক কষ্টে পড়াশুনা শেষ করেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার রফিকুল ইসলাম (৩২)। অভাব অনটনের মধ্যে বাবা-মা কষ্ট করে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করার পর একটি চাকরি জন্য ঘুরেছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকা দিতে না পারায় চাকরি মেলেনি তার। তবু দমে যাননি তিনি। এক সময় চাকরির পিছু ছেড়ে পেয়ারা চাষ শুরু করেন। আর সেই পেয়ারা চাষ করেই রফিকুল হয়েছেন স্বাবলম্বী।
রফিকুল ইসলামের সংসারে বাবা-মা, ভাই, বৃদ্ধ নানী, স্ত্রী-সন্তানসহ ৯ সদস্যের পরিবার। চাকরি না পেয়ে পেয়ারা চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং তার বাগানে কাজ করে অনেকেই ভালো আছেন।
রফিকুল জানান, দুই বছর আগে পুঠিয়ার তারাপুর গ্রামে তার আত্মীয় আবদুল লতিফ মিয়ার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাতের থাই পেয়ারা চাষ তার নজর কাড়ে। আত্মীয়ের সাফল্য দেখে তিনি পেয়ারা চাষের পরিকল্পনা করেন। সেসময়ই গোচর মহল্লার মাঠে বাবার দেয়া সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ শুরু করেন। প্রথম মেয়াদে তার সব খরচ বাদে লাভ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বাগানে প্রায় দুই লাখ টাকার পেয়ারা রয়েছে বলে জানান তিনি। এই সফলতা তাকে আরও সাহসী করে তুলেছে। রফিকুল আগামী বছর আরও আড়াই বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষের পরিকল্পনা করছেন।
রফিকুলের অভাবনীয় সাফল্য দেখে এখন ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে এলাকার কৃষকেরা থাই পেয়ারা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন।
তিনি জানান, প্রথমে ভালোভাবে জমি কর্তন ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে জমিকে পেয়ারা চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। প্রতি বিঘায় ১৬০ থেকে ১৭০টি করে চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের ১৬ মাসের মধ্যেই গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ১৮ মাসের মধ্যেই পেয়ারা পরিপক্ক হয়ে ওঠে।
বাগান পাহারাদার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কাজ করে খাই। বিভিন্ন জায়গায় কাজ খুঁজেও পাইনি। দুই বছর হলো এ বাগানের পরিচর্যা করছি। দুই বেলা খেয়ে প্রতিদিন ১৮০ টাকা করে মজুরি দিচ্ছে। তাতে আমার চার সদস্যের পরিবার ভালোভাবে চলছে।’
রফিকুল বলেন, ‘বছরে তিন দফায় প্রতিটি পেয়ারা গাছে প্রায় ২০ থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত পেয়ারা পাওয়া যায়। প্রতি কেজি পেয়ারা বর্তমানে পাইকারি ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। জমি তৈরি ও পেয়ারা সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত পেয়ারা বিক্রি করে সব খরচ বাদে লাভ হয় ৮০ থেকে থেকে ৯০ হাজার টাকা।’ এ বছর এরই তিনি ইতোমধ্যেই প্রথম দফায় দুই লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করি ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পড়াশুনা শেষ করে আজকাল চাকরির কোনও নিশ্চয়তা নেই। আবার চাকরি পেতে অনেক টাকা ঘুষও দিতে হয়। তাই চাকরির পেছনে না ঘুরে একটা ন্যূনতম পুঁজি নিয়ে নিজে কিছু করাই ভালো।’
এ ব্যাপারে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। রফিকুল সাহেবের মতো পেয়ারা চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন