গত ২ মাস আগে জয়পুরহাট চিনিকল বন্ধ হলেও বিসিক শিল্পনগরীর কল-কারখানা ও জামালগঞ্জ এলাকার ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার পোল্ট্রি শিল্পের বর্জ্য নিয়মিত ফেলানো হচ্ছে তুলশীগঙ্গা নদীতে। যত্রতত্র ডিমের খোসা, মরা মুরগী ও পোল্ট্রির বর্জ্যে খোঁলা নর্দমার মাধ্যমে প্রবাহিত পানি কালচে হয়ে মিশছে তুলশীগঙ্গা নদীতে। এতে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়ছে।
জানা যায়, জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল দিয়ে এলাকার বর্ষার পানি অপসারিত হয়ে আসছে আক্কেলপুরের সোনামুখি এলাকার তুলশীগঙ্গা নদীতে। এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে জয়পুরহাট চিনিকল, পৌরসভা, বিসিক শিল্পনগরী এবং জামালগঞ্জের ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার পোল্ট্রি শিল্প ও হ্যাচারির বর্র্জ্য অপসারণের নর্দমা। এতে আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে সরু নর্দমায়। আর সেই নর্দমার পানি মিশে দূষণ ঘটছে তুলশীগঙ্গা নদী। একই পথে জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্য নিঃসৃত পানি নিষ্কাশন করা হলেও গত ৩০ জানুয়ারি থেকে আখ মাড়াই মৌসুম শেষ হওয়ায় চিনিকলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়েছে।
সরেজমিনে জয়পুরহাট শহর থেকে আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখি তুলশীগঙ্গা নদীতে মিলিত হওয়া বর্জ্য অপসারণ খাল পরিদর্শন করে দেখে গেছে, প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি পোল্ট্রির বিভিন্ন বর্জ্যে সরু হয়ে নর্দমায় পরিণত হয়েছে। জয়পুরহাট পৌর শহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ির নর্দমার পানিও মিশছে এই খালে। এছাড়া শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বিসিক শিল্পনগরীর কল-কারখানার পানিও মিশছে খালটিতে। সেখানে গিয়ে খালের মধ্যে দেখা গেছে অসংখ্য ডিমের খোঁসা আর আবর্জনার স্তুপ। তার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে পৌরসভা ও কল-কারখানার অপসারিত পানি। আর এ থেকে চরম দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালটির জামালগঞ্জ বাইপাস সড়ক সেতু, জয়পুরহাট-আক্কেলপুর আঞ্চলিক সড়কের জামালগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ মোড় এলাকার সেতু, জিয়াপুর প্রাথমিক স্কুল সংলগ্ন সেতু ও রাজকান্দা সেতু এলাকায় দেখা গেছে, পোল্ট্রির বর্জ্যরে স্তুপ। প্লাস্টিকের বস্তা করে খালের উপরেই ফালানো হয়েছে মরা মুরগী, পচা ডিম। একদল কুকুরকেও দেখা গেছে বর্জ্যগুলো নিয়ে টানাটানি করতে। ওইসব বর্জ্যরে কারণে কালো রঙ ধারণ করা পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিশছে আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখি এলাকার তুলশীগঙ্গা নদীতে।
জামালগঞ্জ বাজারের শেফালী পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মুরগীর বর্জ্যে তুলশীগঙ্গা নদী দূষিত হওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ মুরগীর বর্জ্যগুলো ডাম্পিং করা হয় নিজস্ব জায়গায়। আর পানি ফেলানো হয় নিজস্ব পুকুরে। তাহলে খালের বিভিন্ন স্থানে মুরগীর বর্জ্য আসছে কোথা থেকে, জানতে চাইলে তিনি এর উত্তর দিতে পারেননি।
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু বকর বলেন, জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্য থিতানো পানিতে তুলশীগঙ্গা নদী কখনো দূষিত হতে পারে না। কারণ চিনিকলের বর্জ্য নিজস্ব লেগুনে ফেলানো হয়। সেখান থেকে থিতানো যে পানি নর্দমার মাধ্যমে অপসারণ করা হয় সেটা পরিস্কার পানি। তাছাড়া ১ মাস থেকে চিনিকল বন্ধ রয়েছে। কাজেই অনেকে না জেনে চিনিকলের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধে জেলার পোল্ট্রি ও হ্যাচারি শিল্পের বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করার চেষ্টা চলছে। তুলশীগঙ্গা নদীর পানি হঠাৎ কালচে রঙ ধারণ করার বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতরকে জানানো হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৩মার্চ২০