পোল্ট্রি শিল্পকে মডেল হিসাবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

767

[su_slider source=”media: 971,972,973,974″ target=”blank” width=”400″ height=”200″ title=”no” pages=”no” mousewheel=”no” class=”post_slider”]

ফার্মস এন্ড ফার্মার ২৪.কম ডেস্ক: পোল্ট্রি শিল্প আজ বাংলাদেশে বিশাল সম্ভাবনাময় শিল্প হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১ শতাংশ আসছে পোল্ট্রি শিল্প থেকে। সেন্টার ফর ডায়ালগের (সিপিভি) অতিরিক্ত গবেষনা পরিচালক ড.খন্দকার গোলাম মোয়াজেমের সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে পোল্ট্রি শিল্প আশির দশকে বিক্ষিপ্তভাবে শুরু হয়ে অনেক প্রতিবদ্ধকতা  দূর করে নব্বই দশকের পরে এসে বানিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট বড় মিলিয়ে ১.৫ – ২ লক্ষ পোল্ট্রি খামার রয়েছে। ৮০-৯০ টি পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্য তৈরীর আধুনিক মানের বানিজ্যিক  ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ১.৫ – ২ শতাধিক জিপি ও প্যারেন্টস্টোক হ্যাচারী রয়েছে। যে শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ও নির্বাচিত। আর এই শিল্পকে ঘিরে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৭০ – ৭৫ লক্ষ মানুষের যার ৫০% নারী। এদিক থেকে বলতে গেলে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের পরেই পোল্ট্রি শিল্পের অবস্থান। আশির দশকে পোল্ট্রি শিল্পের বিনিয়োগের পরিমান ছিল মাত্র ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রায় ৩৬ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে এই শিল্পের বিনিয়গের পরিমান ২৫ – ৩০ হাজার কোটি টাকা। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির যে পুষ্টি চাহিদা তার সিংহভাগই পুরন করছে পোল্ট্রি শিল্প। ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে মুরগীর মাংশের দৈনিক চাহিদা ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন, আর উৎপাদন হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এছাড়া দিনে ১ কোটি ৮০ লক্ষ পিস  ডিমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৬০ লক্ষ। মাংসের উৎপাদনের জন্য একদিন বয়সী মুরগীর বাচ্চার চাহিদা সাপ্তাহিক ৯০ লক্ষ যেখানে উৎপাদনের পরিমান প্রায় ৯৫ লক্ষ। তাই দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদা পূরনের জন্য এই শিল্পের অবদান অপরিসীম। কারন পুষ্টিমান বিচার করলে এই শিল্পে উৎপাদিত ডিম ও মাংসে প্রচুর পরিমান সুষম খাদ্য বিদ্যমান রয়েছে। ৬০ গ্রাম ওজনের একটি ডিম যে পরিমান ভিটামিন, প্রোটিন পাওয়া যায় তা অন্য কোন দ্রব্যে কল্পনা করা যায় না। বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জানাযায়, ডিম খেলে ডিজিজ বা স্ট্রোক হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আরও জানা গেছে, সপ্তাহে ৫টি ডিম খেলে শরীর থেকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ক্যালরি কমাতে পারে। ফলে বডি ফ্যাট ও কোমরে জমে থাকা মেদ কমাতে পারে ডিম। তাই ডিমকে ইওরোপ আমেরিকায় পাওয়ার হার্ডজ বলা হয়। একইভাবে ব্রয়লার মুরগীর মাংস যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর ও প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং দামও সকলের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। খাদ্যমান বিবেচনায় মূল্য বিচার করলে ডিম ও ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সস্তা এদেশে কিছু নেই। বর্তমান সময়ে মানুষ মিট ও এগ নির্ভর ফাস্ট ফুডের দিকে ঝুকে গেছে। বিষেশ করে শহরের শিশু-কিশোরদের প্রিয় খাদ্য ফাস্ট ফুড চিকেন নাগেট, চিকেন বার্গার, চিকেন শর্মা প্রভৃতি। এরপরও বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতার অভাব ও পোল্ট্রি মাংস ও ডিম সমন্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারনা যেমন- ডিজিজ ও স্ট্রোক হতে পারে, বার্ড-ফ্লু ইত্যাদি কারনে এই শিল্পের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করছে। তাই পোল্ট্রি শিল্প ঘিরে মাঝে মধ্যেই যে অপপ্রচার হয় সেগুলো বন্ধ করা গেলে এবং সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে এই শিল্প আরও ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকা সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি আমিষের বিরাট চাহিদার প্রেক্ষিতে সহজলভ্য যোগান, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এই শিল্প। তাই এই শিল্পকে রক্ষা করার জন্য সার্বিক ভাবে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।