পোল্ট্রি শিল্পে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রান্তিক খামারীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি

314

ক্যাব চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম: যিনি বাচ্চা উৎপাদন করেন, তিনি আবার খামার গড়ে তুলে বাচ্চা প্রতিপালন করছেন আবার যিনি মুরগির খাবার উৎপাদন করছেন তিনিও খামার গড়ে তুলছেন। আর এরাই সময়-সুযোগ বুঝে মুরগি ও ডিমের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে ন্যায্য দামে ডিম ও মুরগি উৎপাদন ও বিপনণে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি করছে।

অন্যদিকে যিনি কোটি টাকা বিনিয়োগে খামার করছে তার যে রকম ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ ও ফায়ার ছাড়পত্র লাগছে, তেমনি ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগে খামার করছে তার জন্য একই ব্যবস্থা, ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীগুলো বড় উদ্যোক্তাদের সাথে উৎপাদন খরচ ও মুরগি বিক্রয় নিয়ে পেরে উঠছে না।

আর গুটিকয়েক বৃহৎ পোল্টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের আগ্রাসী তৎপরতা থামাতে হলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীদের সরকারি প্রণোদনা দিতে হবে, না হলে পুরো দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের সুশাসন হুমকির মুখে পড়বে। কারণ সাধারণ মানুষের প্রাণিজ আমিষের সিংহভাগ পোল্ট্রি শিল্প যোগান দিচ্ছে এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিরাই মূল উৎস।

এ পরিস্থিতিতে পোল্ট্রি শিল্পে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীদের রাস্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানানো হয়েছে চট্টগ্রামে ক্যাব’র পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে অনুষ্ঠিত অ্যাডভোকেসি সভায়।

ইউকে এইড, বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় প্রকাশ প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম আয়োজনে ২৯ আগস্ট নগরীর খুলসীতে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন-জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক জসিম। আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাহিদা আকতার, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, ক্যাব পাঁচলাইশের সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব চট্টগ্রামের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর মশিউর রহমান, পাঁচলাইশ থানা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া খাতুন, সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আবুল হাশেম, ক্ষুদ্র খামারী রুখসানা আখতারুন্নবী, মোহাম্মদ জসিম, আবদুর রহিম, ক্ষুদ্র পোল্ট্রি খাদ্য বিক্রেতা মো. সোসলেম উদ্দীন, মো. রফিক প্রমুখ।

সভায় বলা হয়, দেশের সাধারণ মানুষের প্রাণীজ আমিষের সিংহভাগ পোল্ট্রি শিল্প যোগান দিলেও প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রয়োজনীয় লোকবল ও লজিস্টিক সুবিধার অভাবে জনগনের কাছে এ শিল্পের বিষয়ে সঠিক তথ্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়াও কিছু মানহীন পোল্ট্রি ফিড বাজারজাত, খুচরা পোল্ট্রি বিক্রেতারা যত্রতত্র অপরিষ্কারাছন্ন পোল্ট্রি জবাই ও বিক্রি করলেও তার যথাযথ নজরদারি সম্ভব হচ্ছে না। নিরাপদ খাদ্য ও পোল্ট্রি বিষয়ে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি থাকায় এ খাতে উদ্যোক্তারা ন্যায্য মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আবার গুটিকয়েক এ সেক্টরের যাবতীয় সুবিধা হাতিয়ে নিতে তৎপর। ফলে পোল্ট্রি শিল্পে জড়িত অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও খামারীরা খামার মাঝপথে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর শিল্প উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশীয় প্রাণীজ আমিষের যোগান হুমকির মুখে পড়বে। তাই দেশীয় প্রাণীজ আমিষের যোগান ঠিক রাখতে পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত পোল্ট্রি ফিড উৎপাদক, ডিলার, খামারী ও ব্রয়লার উৎপাদকদের নিরাপদ ও মানসম্মত পোল্ট্রি খাবার, উৎপাদন, সরবরাহ এবং খুচরা পর্যায়ে লাইভ বার্ড বিক্রিতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আর মাঠ পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তা-ক্রেতা পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন