নাহিদ বিন রফিক: প্রজননের মাধ্যমে একটি গাভী নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চা প্রসব করে। এক্ষেত্রে গাভীর প্রতি অবহেলা কিংবা অসাবধানতার কারণে কখনো কখনো বড় ধরনের ঝুঁকি দেখা দেয়। এতে বাছুর, এমকি গাভীর মৃত্যুও হতে পারে। তাই ওই মুহূর্তে গাভীর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এবার জেনে নেয়া যাক কীভাবে গাভীর যত্ন নিতে হবে-
- যে স্থানে বাচ্চা প্রসব করানো হবে সেটি খোলামেলা এবং নিরিবিলি এমন জায়গা হওয়া চাই যেন অন্য কোনো লোকের চোখ সহজেই না পড়ে।
- স্থানটিতে শুকনো খড়ের নরম বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা হতে হবে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত।
- প্রসবের সময় বিকট শব্দ কিংবা কোনো প্রাণির চিৎকার দ্বারা পরিবেশকে অশান্ত করা যাবে না।
- জরায়ুতে বাছুরের সামনের দু’পা এবং মাথার অবস্থান যদি সম্মুখভাগে না হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি অস্বাভাবিক প্রসব। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ভেটেরিনারি সার্জনের সাহায্য নিতে হবে।
- প্রসবঅবস্থায় গাভী বার বার ওঠানামা করে। এসময় খুব সাবধানে বাছুরকে ধরে আস্তে আস্তে টেনে বের করতে হয়।
- ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাছুরকে পাটের চটের ওপর রেখে নাক-মুখের শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে দিতে হবে। যদি শ্লেষ্মা বের না হয় তাহলে বাছুরের পেছনের দু’পা ধরে উপরের দিকে উঁচু করলেই তা বেরিয়ে আসবে। তবে বাছুরকে ওর মায়ের সামনে দিলেই সবচেয়ে ভালো হয়। এতে গাভী তার বাচ্চার নাক-মুখসহ শরীরের অন্যান্য অংশ চেটে পরিষ্কার করে দেবে।
- বাছুরের নাভি ঝরে না পড়লে অথবা লম্বা হলে দু’ইঞ্চি রেখে বাকি অংশ ধারালো ছুরি বা ব্লেড দিয়ে কেটে সেস্থানে ডেটল বা সেভলন লাগাতে হবে। নয়তো নাভির মাধ্যমে রোগজীবাণু সংক্রমিত হয়ে ধনষ্টংকার কিংবা নাভিফোলা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
- প্রসবের পরপরই একটি বালতিতে কুসুমগরম পানির সাথে দেড় কেজি পরিমাণ গমের ভুসি, আধা কেজি চিটাগুড়, আধা কেজি ভাতের মাড় এবং ৫০ গ্রাম লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে গাভীকে খেতে দিতে হবে।এ জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে গাভীর গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যেতে সহায়তা করবে। এছাড়া কুসুমগরম পানিতে ঝোলাগুড় মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
- প্রসবের পর জীবাণুনাশক ওষুধ পানিতে মিশিয়ে গাভীর পেছনের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- গাভীর ফুলপড়া নিয়ে অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফুল না পড়ে তাহলে অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। কারণ যথাসময়ে না পড়লে তা পচে জরাযুতে পুঁজ জমতে পারে। ফুল পড়ে গেলে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।
- ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাছুরকে প্রথমেই গাভীর গাঢ় লালচে বর্ণের শাল দুধ খাওয়াতে হবে। দুধ না খাওয়ালে ওলান শক্ত হয়ে প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লালচে রঙের এ দুধ অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং রোগপ্রতিরোধক। দুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই দুধের বাঁটসহ ওলান এবং গাভীর তলপেট কুসুমগরম পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়।