মিলবে পুষ্টি বাড়বে ফলন আয় বাড়াবে মৌ পালন

960

মৌ পালন

মধু মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক অপূর্ব নেয়ামত। স্বাস্থ সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণ অপরিসীম। রাসূলুল্লাহ (সা.) একে ‘খাইরুদ্দাওয়া’ বা মহৌষধ বলেছেন। আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি চিকিৎসা শাস্ত্রেও মধুকে বলা হয় মহৌষধ। এটি যেমন বলকারক, সুস্বাদু ও উত্তম উপাদেয় খাদ্যনির্যাস, তেমনি রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থাপত্রও। আর তাই তো খাদ্য-পুষ্টি ও ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ নির্যাসকে প্রাচীনকাল থেকেই পারিবারিকভাবে ‘পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক’ পানীয় হিসেবে মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে ব্যবহার করে আসছে। মধুতে যে সব উপকরন রয়েছে তন্মধ্যে প্রধান উপকরন হলো সুগার বা চিনি। চিনি আমরা অনেকেই এড়িয়ে চলি। কিন্তু মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ এ দুটি সরাসরি মেটাবলাইজড হয়ে যায় এবং ফ্যাট হিসাবে জমা হয় না। মধুতে এ্যালুমিনিয়াম, বোরন, ক্রোমিয়াম, কপার, লেড, টিন, জিংক ও জৈব এসিড (যেমন- ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক এসিড এবং অক্সালিক এসিড), কতিপয় ভিটামিন, প্রোটিন, হরমোনস, এসিটাইল কোলিন, এন্টিবায়োটিকস, ফাইটোনসাইডস, সাইস্টোস্ট্যাটিক্স এবং ১৯-২১% পানি ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। মধু এমন ধরনের ঔষধ, যাতে পচন নিবারক (এন্টিসেপটিক), কোলেস্টেরল এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

মধু উৎপাদন প্রক্রিয়া:
শ্রমিক মৌমাছি ফুল থেকে নেকটার ও পোলেন সংগ্রহ করে তা লালার সঙ্গে মিশিয়ে মধু থলিতে করে মৌচাকে নিয়ে আসে। এরপর শ্রমিক মৌমাছি তার পাখা নেড়ে বাতাস সৃষ্টি করে সংগৃহীত রস থেকে পানি বাষ্পায়িত করার পর খাঁটি মধু চাকের নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠে জমা করে এবং মোম দিয়ে প্রকোষ্ঠের মুখ বন্ধ করে দেয়।

মৌ পালনের উপকারিতা:

  • মহামূল্যবান মধু ও মোম পাওয়া যায়।
  • পারাগায়নে সাহায্য করার কারনে ফসলের ফলন দেড় থেকে দুইগুন বেড়ে যায়।
  • বীজের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
  • জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখে।
  • গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে।

মধুর উপকারিতা:

  • হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। রক্তনালী প্রসারনের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং হৃদপেশির কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।
  • মধুর রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা, যা দেহকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও কোষকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  • মধুর ক্যালরি রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে রক্তবর্ধক হয়।
  • শরীরের বিভিন্ন ধরনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
  • ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধি মধু স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের কলা সুদৃঢ় করে।
  • গলা ব্যাথা, কাশি-হাঁপানি এবং ঠাণ্ডাজনিত রোগে বিশেষ উপকার করে।
  • গ্লাইকোজেনের লেভেল সুনিয়ন্ত্রিত করে।
  • আলচার ও গ্যাস্টিক রোগের জন্য উপকারী।
  • বার্ধক্য অনেক দেরীতে আসে।
  • মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • ক্ষুধা, হজমশক্তি ও রুচি বৃদ্ধি করে।
  • শিশুদের দৈহিক গড়ন ও ওজন বৃদ্ধি করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • দৃষ্টিশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • দুর্বল শিশুদের মুখের ভিতর পচনশীল ঘা’র জন্য খুবই উপকারী।
  • রক্ত পরিশোধন করে।
  • শরীর ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে।
  • জিহ্বার জড়তা দূর করে।
  • মধু মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
  • বাতের ব্যথা উপশম করে।
  • মাথা ব্যথা দূর করে।
  • দাঁতকে পরিস্কার ও শক্তিশালী করে।

সূত্র: AIS