প্রস্তাবিত শস্য বীমা প্রকল্প : কৃষি ও কৃষকের জন্য কতটা লাভজনক?

421

শালা-দুলাভাই সবজি চাষি
কৃষকের আর্থিক উন্নতি, সামাজিক অস্থিরতা রোধ ও কৃষির উন্নয়নে শস্য বীমা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আপাতত পাইলট প্রকল্প হিসেবে হাওর অঞ্চলের ৭টি জেলা- সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বীমা প্রকল্পটি চালু করা হবে।

পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এটি ছড়িয়ে দেয়া হবে। আমরা মনে করি, নানা দুর্যোগের কারণে প্রতিবছর যেখানে হাজারও কৃষককে ফসলের ক্ষতি, আর্থিক ক্ষতির কারণে সামাজিক অস্থিরতার মুখে পড়তে হয়, সেখানে বীমার মাধ্যমে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া ইতিবাচক উদ্যোগ। এতে কৃষকের আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি গোটা কৃষি খাত উপকৃত হবে।

জানা যায়, ১০ ধরনের সুবিধা নিয়ে শস্য বীমা প্রকল্পটি চালু করা হচ্ছে। এতে উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ চ্যানেল তৈরি ও স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন, স্টেশনের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার মাত্রা নির্ণয়, কৃষকের মাঝে সচেতনতা তৈরি, কৃষিবান্ধব রেগুলেটরি নেটওয়ার্ক প্রণয়ন এবং বীমাসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। আশার কথা, এরই মধ্যে শস্য বীমার ঝুঁকি মোকাবেলায় সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের মাধ্যমে একটি ধারণাপত্র নেয়া হয়েছে। অর্থবিভাগ ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত ধারণাপত্র পেয়েছে এবং এ সংক্রান্ত কাজ শুরু করেছে।

প্রতিবছর মৌসুমি বন্যা, আগাম বন্যা, পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষককে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। ২০১৭ সালের স্বাভাবিক ও আগাম বন্যায় হাওর অঞ্চলে ৫২ লাখ ৫০ হাজার টন ফসলের ক্ষতি হয়। এতে কৃষকের ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা হারানোসহ নানা সমস্যা, সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়। তা ছাড়া চালের বাজারে দেখা দেয় অস্থিরতা। এ বছর তো ধানের দাম না পেয়ে আর চাষাবাদ না করার হুমকি, পেশা বদল, ভিন্ন পেশা গ্রহণের মতো বিষয় সামনে নিয়ে আসেন তারা। এ অবস্থায় বীমার মাধ্যমে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার মাধ্যমে কেবল কৃষকের সমৃদ্ধি নয়, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা নিশ্চিত করার বিষয়টি চলে আসবে। ফলে এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।

শস্য বীমার সম্ভাবনার পাশাপাশি ঝুঁকির কিছু বিষয়ও উঠে এসেছে ধারণাপত্রে। তাতে রয়েছে জনসচেতনতা, অবকাঠামোগত সমস্যা, কারিগরি, রেগুলেটরি ও বীমা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাব ইত্যাদি। কিন্তু সরকার ইতিবাচক হলে এবং সদূরপ্রসারী চিন্তা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে সমস্যা হবে না বলে আশা করা যায়। অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সব দফতর এগিয়ে এলে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকেই প্রস্তাবিত শস্য বীমার পাইলট প্রকল্প চালু করে কৃষক, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সূত্রপাত হবে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন