ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দায় বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পেঁয়াজের জমি

57

 

হঠাৎ বৃষ্টিতে ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দায় তলিয়ে গেছে মুড়িকাটা-হালি পেঁয়াজের ক্ষেত ও বীজতলা। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। আর কয়েকদিন পরই ওঠার অপেক্ষায় ছিল মুড়িকাটা পেঁয়াজ। জমি তলিয়ে যাওয়ায় সেই পেঁয়াজও পচে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সারাদেশেই পেঁয়াজ উৎপাদনের শীর্ষে রয়েছে ফরিদপুর জেলা। এ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের উৎপাদন হয় সালথা ও নগরকান্দা উপজেলায়।

ওই এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকার জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের বয়স হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ দিন। এ পেঁয়াজ পরিপক্ক হতে মোট নম্বই দিন সময় লাগে। পানি দ্রুত না নেমে গেলে এ পেঁয়াজ পচে যাবে। অপরদিকে, নতুন করে লাগানো হচ্ছে হালি পেঁয়াজের চারা। পাশাপাশি রয়েছে হালি পেঁয়াজের বীজ তলাও। বৃষ্টির পানিতে এসব পেঁয়াজ তলিয়ে যাওয়ায় সব চারা মরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সালথার মাঝারদিয়া এলাকার তরুণ কৃষক রুদ্র রনি (২৪) জানান, জমিতে চাষ দিয়ে, সার-কীটনাশক পানি ও কৃষাণ খরচ দিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পানিতে ডুবে যাওয়ায় এসব খেতে আবার নতুন করে চারা লাগাতে হালিসহ বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা খরচ হবে।

সালথার খালিশপুট্টি এলাকার কৃষক বিশু মোল্লা (৫১) বলেন, তিনি এবার চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। এখনও মাঠে অনেকে বীজতলা থেকে উঠিয়ে ক্ষেতে হালি পেঁয়াজ লাগাচ্ছে। অনেকে ২ থেকে ৫ দিন আগে চারা লাগিয়েছে। এ কারণে এসব চারা সুন্দরভাবে বেঁচে না উঠায় পেঁয়াজের গোড়ায় পানি জমে সব পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা ধার-দেনা করে পেঁয়াজ লাগাই। আবার অনেক সময় হুটহাট করে দাম বাড়লেও আমরা সেই দাম পাই না। তার ওপর প্রকৃতির এমন অভিশাপ আমাদের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা।

নগরকান্দার বাউতিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লোকমান মোল্লা (৫২) জানান, তিনি পেঁয়াজ লাগানোর জন্য নিজেই চারা উৎপাদন করেছিলেন তিন কেজি পেঁয়াজ বীজের। সেই বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় এখন তিনি চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন।

তিনি বলেন, ক্ষেতের যে অবস্থা হয়েছে এতে এখন যদি রোদও উঠে তবুও পেঁয়াজের গোড়া পচে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে। এখন জমিতে লাগানোর জন্য বাইরে থেকে চারা কেনা ছাড়া উপায় থাকবে না। এতে বিঘাপ্রতি খরচ অন্তত ৩০ হাজার টাকা বেড়ে যাবে।

নগরকান্দা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তিলক কুমার ঘোষ বলেন, এ উপজেলায় চলতি বছর প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হবে। এর মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৩৫০ হেক্টর এবং হালি পেঁয়াজের ৪০ হেক্টর জমিতে হঠাৎ বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে। বৃষ্টি থামলেই কীভাবে দ্রুত পানি সরানো যায় এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বৃষ্টির কারনে কিছু পেঁয়াজের ক্ষতি হবে। তবে বড় কথা হলো, পেঁয়াজের মৌসুম পিছিয়ে যাবে। এ বৃষ্টির কারণে এটা খুব সংকটজনক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ফরিদপুর জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর হালি পেঁয়াজ ও ৫ হাজার হেক্টর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির ব্যাপারটি আমরা মনিটরিং করছি। যেসব জমির পেঁয়াজ তলিয়ে গেছে সেই জমির পানি আগামী দুই/তিন দিনের মধ্যে নেমে যাবে। এজন্য পেঁয়াজের তেমন ক্ষতি হবে বলে মনে হচ্ছে না।