চায়না কমলার চাষ করে লাখ টাকা আয় কলেজছাত্র শাওনের

72

 

এক সময় মানুষের ধারণা ছিল চায়না কমলা শুধুমাত্র পাহাড়ি অঞ্চলেই চাষ হয়। তবে সেই ধারণা এখন পাল্টে গেছে। চায়না কমলার চাষ হচ্ছে যশোরের সমতল ভূমিতে। পড়াশোনার পাশাপাশি চায়না কমলা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলা ভোজাগাতী ইউনিয়নের জামজামি গ্রামের কলেজছাত্র মুশফিকুর রহমান শাওন (২১)।

শাওন যশোর এমএম কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। শুধুমাত্র চায়না কমলা নয়, তার বাগানে রয়েছে মাল্টা ও পেয়ারার প্রায় দুই শতাধিক গাছ। সেগুলোতেও এসেছে ফল।

কমলা আর মাল্টার বাগানে পা ফেলতেই মিষ্টি সুবাসে মন ভরে যায়। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা রঙিন কমলা আর মাল্টা। যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল তখন ঘরে বসে উদ্যােক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করে শাওন। এরপর স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আতিয়ার রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমিতে চায়না কমলা আর বারী-১ জাতের মাল্টার চারা গাছ রোপণ করেন। দুই বছরের মাথায় তার মাল্টার গাছে ফল আসা শুরু হয়। চলতি বছর ফল এসেছে তার চায়না কমলার গাছেও।

কলেজছাত্র মুশফিকুর রহমান শাওন বলেন, ২০২০ সালে মাল্টা ও চায়না কমলার কিছু চারাগাছ সংগ্রহ করে দুই বিঘা জমিতে রোপণ করি। বর্তমানে আমার বাগানে দুই শতাধিক মাল্টা ও ৬৫টিরও বেশি চায়না কমলার গাছ রয়েছে। আমার বাগানে গ্রামের আরও কয়েকজন মানুষ অর্থের বিনিময়ে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।

মুশফিকুর রহমান শাওন বলেন, কমলা-মাল্টার বাগানে শুরুতে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেছি। এ পর্যন্ত বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার কমলা ও মাল্টা বিক্রি করেছি। খরচের টাকা বাদ দিয়েও আমি প্রথম ফলনে অর্ধ লাখ টাকা আয় করেছি।

পরিচর্যার ব্যাপারে শাওন বলেন, অবসর সময়ে আমিই বাগান দেখভালের কাজে সময় পার করি। বাগানে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার দিতে হয় আর মাসে একবার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। পাশাপাশি গাছের গোড়া পরিষ্কার করা পানি দেওয়া এ কাজগুলো করতে হয়।

শাওনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আতিয়ার রহমাম বলেন, অনেক উঠতি বয়সী ছেলেরা মোবাইলে আর আড্ডা দিয়ে সময় পার করে। পড়াশোনাও তারা বেশি মনোযোগী হয় না। কিন্তু আমার ছেলে যখন নিজে কিছু করার আগ্রহ প্রকাশ করে তখন আমি তাকে উৎসাহ দেই এবং পর্যাপ্ত সহোযোগিতা করি।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে প্রায় লাখ টাকা ব্যয় করে এই চাষ শুরু করি। এ পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি করেছি। খরচের টাকাও উঠে গেছে। বর্তমানে আমার বাগান থেকে চারা তৈরি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে প্রতি পিস চারা বাইরের মানুষদের কাছে বিক্রি করছি। অনেকে বাগান দেখতে এসে দু-একটা চারা কিনে নিয়ে যায়।

প্রতিবেশী বাসিন্দা শামীম হোসেন বলেন, শাওন একজন কলেজছাত্র হয়ে অল্প সময়ে রসালো ফলের বাগান করে সফলতা পেয়েছে। এটা একটা দৃষ্টান্ত। ওর বয়সী অনেক ছাত্রই বাইরে আড্ডা দিয়ে সময় পার করে। ওর এমন উদ্যোগ অনেকের মধ্যে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে।

মনিরামপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অজয় কুমার বিশ্বাস বলেন, বর্তমান সময়ে অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে বিভিন্ন ফল-ফলাদির চারা সংগ্রহ করে রোপণ করে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। এটি একটি ভালো বিষয়। শাওনের বাগানও আমাদের মনিটরিংয়ের আওতায় আছে। ওখানকার ব্লক কর্মকর্তা দেখভাল করছে।