বন্যা পরবর্তী কৃষকদের করণীয়

745

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রতিবছরই দেশের কোথাও না কোথাও বন্যা দেখা দেয়। প্রতিরোধ-প্রতিকার করা সম্ভব না হলেও কিছু বিশেষ প্রযুক্তি পদ্ধতি অনুসরণ করলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেয়া যায়। কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভিন্ন সংস্থা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের করণীয় কৌশল তুলে ধরা হলোথ বন্যার পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা, পলি, বালি এবং আবর্জনা যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার করতে হবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ৫ থেকে ৭ দিন কাদাযুক্ত ধানগাছ পরিষ্কার পানি দিয়ে প্রয়োজনে ¯েপ্র মেশিন দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে; পানি নেমে যাওয়ার পর পরই সার প্রয়োগ করা ঠিক না এতে ধানগাছ পচে যেতে পারে।

পানি নেমে যাওয়ার ১০ দিন পর ধানের চারায় নতুন পাতা গজানো শুরু হলে বিঘাপ্রতি ৮ কেজি ইউরিয়া ও ৮ কেজি পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি ওঠেনি সেখানে রোপণকৃত বাড়ন্ত আমন ধানের গাছ (রোপণের ৩০ থেকে ৪০ দিন পর) থেকে ২ থেকে ৩টি কুশি রেখে বাকি কুশি সযতেœ শিকড়সহ তুলে নিয়ে অনতিবিলম্বে অন্য ক্ষেতে রোপণ করা যেতে পারে। যেসব এলাকায় বন্যায় উঁচু জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বীজতলা করা সম্ভব নয় সে ক্ষেত্রে ভাসমান অথবা দাপোগ বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ব্রি উদ্ভাবিত আলোকসংবেদনশীল উফশী ধানের জাত যেমন- বিআর-৫, বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৫৪ এবং নাজিরশাইলসহ স্থানীয় জাতগুলো রোপণ করতে হবে। এ ছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালীন জাত ব্রি ধান৫৭ ও ব্রি ধান৬২ রোপণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বীজতলা করা যাবে। তবে উল্লিখিত জাতগুলো নাবিতে রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা ৪ থেকে ৫টি এবং রোপণ দূরত্ব ২০ঢ১৫ সেন্টিমিটিার; বিলম্বে রোপণের ফলে দ্রুত কুশি উৎপাদনের জন্য সুপারিশকৃত টিএসপি, জিপসাম ও জিংকসহ ৩ ভাগের ২ ভাগ ইউরিয়া জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া রোপণের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। যেসব এলাকায় পুনরায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম (উঁচু ও মধ্যম উঁচু) সেসব জমিতে অংকুরিত বীজ সরাসরি জমিতে ছিটিয়ে বপন করা যায়। সে ক্ষেত্রে রোপণ পদ্ধতির চেয়ে ৫ থেকে ৭ দিন আগে ফলন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া ধানগাছের যাবতীয় পরিচর্যা যেমন- আগাছা দমন, পোকামাকড় ও রোগাক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা, সুষম পরিমাণে সার প্রয়োগ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যা পরবর্তীতে চারাগাছ সম্পূূর্ণভাবে মাটিতে লেগে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ৬০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ¯েপ্র করতে হবে।

বন্যার পরবর্তী সময়ে ধানগাছে মাজরা, বাদামি ও সাদা পিঠ গাছ ফড়িং, পাতা মোড়ানো এবং পামরি পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পোকা বিশেষে হাত জাল, পার্চিং এবং প্রয়োজন হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যায়; দেশের উত্তরাঞ্চলে আগাম শীত আসার কারণে ১৫ সেপ্টেম্বর এবং মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে ২০ সেপ্টেম্বরের পর আমন ধান রোপণ করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে আগাম রবি ফসলের আবাদ করা যায়। আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার কাছের কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন। তাছাড়া কৃষিবিষয়ক তথ্য পেতে যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে কৃষি কল সেন্টারে ১৬১২৩ নাম্বারে ফোন করুন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৪জুন২০